২৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ - ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ - 09 December, 2025

কুড়িগ্রামে শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগে সাবেক সাংসদ সাইফুর রহমান রানাকে জেলা বিএনপির শোকজ

4 months ago
254


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপি পৃথক দুটি অফিস এবং গণ অভ্যুত্থানের বছরপূর্তি অনুষ্ঠান পৃথকভাবে পালন করাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রæপের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। উদ্ভুদ পরিস্থিতিতে জেলা কমিটির অন্যতম সদস্য সাবেক সাংসদ সাইফুর রহমান রানাকে ২৪ ঘন্টার সময় বেঁধে দিয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করেছে জেলা বিএনপি। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও শোকজের জবাব দেননি অভিযুক্ত সাইফুর রহমান রানা। জেলা বিএনপি বলছেন দলীয় আলোচনার পরে পরবর্তী সিদ্ধান্ত।

জেলা বিএনপির আহবায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ও সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ স্বাক্ষরিত নোটিশ প্রদান করা হয় চলতি মাসের ৪ আগস্ট। কারণ দর্শানো নোটিশে বলা হয়, গত ৭ এপ্রিল নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি দেয়া হয়। যার নির্দিষ্ট  একটি অফিস বিদ্যমান। তারপরও আপনি পূর্বের নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির সাইনবোর্ড ও অফিসটি এখনো আনার বাসভবণে খুলে রেখেছেন। যা দলে শৃংখলা পরিপন্থি। এমতাবস্তায় আপনার বিরুদ্ধে দলের শৃংখলা ভঙ্গ এবং গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপের জন্য কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হইবে না, তা আগামি ২৪ ঘন্টার মধ্যে নি¤œ স্বাক্ষরকারীগণের কাছে লিখিত জবাব প্রদানের জন্য বলা হইল।

জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সাংসদ ও বর্তমান জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সাইফুর রহমান রানা তার বিরুদ্ধে আণিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বাসায় উপজেলা বিএনপির অফিস কিংবা সাইনবোর্ড নেই। দলের যখন দুর্দিন ছিল কোথাও অফিস ছিল না তখন আমি আমার বাসায় উপজেলা বিএনপির কার্যকম পরিচালনার সুযোগ দেই। এখন নতুন কমিটি হয়েছে, তারা অফিসে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উপজেলা বিএনপির কোন গ্রুপিংয়ের সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। আর থাকবেই বা কেন! আমি তো উপজেলা বিএনপিতে পদ পদবী নিবো না। আমি জেলা বিএনপিতে নেতৃত্ব দেই আমি জেলা বিএনপিতেই কাজ করবো। এর বাইরেও আমি কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য। ৫ আগস্ট পৃথক অনুষ্ঠানের যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে সেটিও সঠিক নয়। উপজেলা বিএনপি পৃথক একটি সভা-সমাবেশ আয়োজন করে। সেখানে আমাকে আমন্ত্রন জানানো হয়নি। উপজেলা ছাত্রদল এবং যুবদল পৃথক অনুষ্ঠান আয়োজন করে আমাকে আমন্ত্রন করে। অতিথি হিসেবে এই অনুষ্ঠানে যাওয়া কোন অপরাধ হতে পারে না। জেলা কমিটির পক্ষ থেকে শোকজের পত্র প্রাপ্তীর কথা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তাই কোন জবাব দেইনি।

এ ব্যাপারে নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম রসুল রাজা জানান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুর রহমান রানা নিজের ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপিতে দ্বন্ধ সংঘাত ও বিভক্তির ইন্ধন দিয়ে চলছেন। ফলে দলকে সুসংগঠিত ও শৃংখলা ফেরানো যাচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, চলতি বছর এপ্রিল মাসে নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। জেলা কমিটির অনুমতি সাপেক্ষ নাগেশ্রীব বাসস্টান্ড সংলগ্ন ভাড়ায় নাগেশ^রী উপজেলা বিএনপির অফিস খোলা হয়। এখান থেকেই পরিচালনা করা হয় উপজেলা বিএনপির সকল কার্যক্রম। কিন্তু সাইফুর রহমান রানা তার নিজ বাড়িতে নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপি কার্যালয় সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছেন। এখান থেকেই তিনি বিপদগামি নেতাকর্মীদের নিয়ে এবং যুবদল, ছাত্রদল ও কৃষক দলের নেতাকর্মীদরকে নিয়ে দলের গ্রুপিং জিইয়ে রেখেছেন। ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক আনন্দ র‌্যালি ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে উপজেলা মুক্তমঞ্চে দলীয় ব্যানারে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অথচ এই অনুষ্ঠানকে পাশ কাটিয়ে সাইফুর রহমান রানা তার অনুগত কতিপয় নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে কৃষকদল, যুবদল, ছাত্রদলের সমন্বয়ে পৃথকভাবে আনন্দ র‌্যালি বের করে এবং তার নিজ বাসায় মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। এসব ঘটনাই দলের শৃংখলা পরিপন্থি দ্বন্দ্বের মুল কারণ নাগেশ্বরী থেকে খ্যাতিমান চিকিৎসক ইউনুছ আলী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। একইভাবে আমি নিজেও কুড়িগ্রাম-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। আমার বাবা মকবুল হোসেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। আমি নিজে রাজশাহী বিশ্বিবদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে হাতেখড়ি নেই। দল যাকে মনোনয়ন দিবে আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো। আর মনোনয়ন চাওয়া এটা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু সাইফুর রহমান রানা তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় তার প্রতিদ্বনিদ্ব মনোনয়ন প্রত্যাশী কাউকে বরদাশত করছেন না।

জেলা বিএনপির আহবায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক সাইফুর রহমান রানাকে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কোন জবাব পাওয়া যায়নি। আজ রাতে দলে এ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করে বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটিতে অবহিত করা হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির যে সিদ্ধান্দ নিবে, সে মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth