১৬ আশ্বিন, ১৪৩২ - ০১ অক্টোবর, ২০২৫ - 01 October, 2025

৫০ বছর ধরে একই মাঠে চলছে নামাজ ও দুর্গাপূজা

3 hours ago
40


আব্দুল আজিজ মজনু:

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ধর্মিয় অসাম্প্রদায়িক মূল্যরোধের মাধ্যমে বিরল দৃষ্ট্রান্ত স্থাপন করেছে মুসলমান ও হিন্দু ধর্মের ধর্মপ্রাণ মানুষজন। বর্তমানে একই মাঠে হচ্ছে পবিত্র নামাজ মসজিদে অন্যদিকে মন্দিরে হচ্ছে দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য হিন্দ ধর্মিয় কালচার। চলছে উলুধ্বনি, জিকির, আযান ও পবিত্র নামাজ। এ ভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতির রেখে যুগ যুগ ধরে পালন করে চলেছে পৃথক দুইটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে। সরে জমিনে দেখলে অবাক হওয়ার মত এক দিকে লেখা রয়েছে কাচারী মাঠ জামে মসজিদ অন্যদিকে লেখা রয়েছে কাচারী মাঠ দূর্গাপূজা কেন্দ্রীয় মন্দির। অনুমান ৫০ গজ দুরে পৃথক দুইটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। মানবতার চিরন্তন বন্ধন হিসেবে উদারণ তৈরি করেছেন গত ৫০ বছর ধরে দু’সম্প্রদায়ের মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, দেশ স্বাধীনের পূর্বে কোচবিহারের মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র ভ’প বাহাদুর ফুলবাড়ীর চাকলায় এসে সনাতনি হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন উৎসবসহ দুর্গাপূজা পালন করার জন্য ছোট আকারে চালাঘর তৈরি করেন। এটি স্থানীয় কাচারীমাঠ হিসেবে তখন থেকে পরিচিত। যাহা এখরও মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মপ্রাণরা লালন করে থাকেন। বর্তমানে এখানে রয়েছে উপজেলা ভূমি ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস। এরইমধ্যে দেশ স্বাধীনের পরপরেই স্থানীয়দের উদ্দ্যোগে তৈনি করা হয় একই টিনসেড একটি ছোট্ট আকারের নামাজ ঘর। এটি ধীরে ধীরে বড় একটি জামে মসজিদে পরিনত হয়।

অদ্যবদি পাশাপশি দুইটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে স্বস্ব ধর্ম পালন করলেও কোন প্রকার অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি। ঘটবেও না এমনটি আশা করেন দু”সম্প্রদায়ের ধর্মপ্রাণরা।

প্রতিবছরের নেয় এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে কাছারী মাঠে শারদীয় দুর্গাপূজা। ঠিক দুপুরে নবমীর দিন দেখা গেল প্রসাদ বিতরণ করছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। দুপুরে পবিত্র জোহরের নামাজের আযান শুরু হলেই বাজছে না ঢাক ও ঢোল। কি মধুর একটি সম্পর্ক। দুই ধর্মের লোকজনই নিজ-নিজ ধর্মীয় আচার ও নিয়ম পালন করে আসছেন। এতে কারো কোনো অসুবিধা নেই।

নামাজ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার বেজে ওঠে মন্দিরের ঢাকঢোলের বাজনা। চলছে পূজা-অর্চনা, উলুধ্বনি ও ঢাকের বাজনা। পূজারি ও দর্শনার্থীর প্রতিমা দেখতে এবং পূজায় অংশ নিতে আসছেন।

স্থানীয় শুশিল চন্দ্র বর্¤§ন (৭৮), ভারত চন্দ্র রায় (৪৫), বাবু বীরেন চন্দ্র রায় (৫৩) জানালেন, ১৯৪৭ সালে কেন্দ্রীয়  সার্বজনীন মন্দির হিসেবে এটি পরিচিত। এখানে পূজা করছি। পাশাপাশি মসজিদ ও মন্দির। এতে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না। মুসলিম ধর্মের মানুষ আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে। আমরাও নামাজ ও আজানের সময় পূজা বন্ধ রাখি। যুগযুগ এই সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। হিন্দু-মুসলিম আমরা ভাই ভাই, একসঙ্গে মিলেমিশে থাকি। কোনোদিন দুই ধর্মের মানুষদের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি, ভবিষ্যতেও আশা করি ঘটবে না।

স্থানীয় বাসিন্দা ও কাছারী মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার প্রভাষক আরাবুর রহমান বলেন  আমি মসজিদ ও মন্দির জন্মের পর থেকেই দেখছি। সনাতন ধর্মের লোকজন এখানে পূজা করেন। এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা তাদের সহযোগিতা করি। আমরা সবসময় লক্ষ্য রাখি যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়।

দুর্গাপূজা মন্দির কমিটির সভাপতি বীরেন কুমার রায় বলেন, এই মন্দির বহু বছরের পুরোনো। পাশেই মসজিদ। হিন্দু-মুসলমান আমরা যার যার ধর্ম পালন করি। মুসলিম ভাইয়েরা আমাদের সহযোগিতা করেন। আজ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করি কখনো ঘটবেও না।

ইউএনও মেহেনুমা তারান্নম জানান, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। দীর্ঘ দিন ধরে যার যার ধর্ম উৎসব তারা পালন করেছেন। ধর্মপ্রাণরা পাশাপাশি  মসজিদ ও মন্দির থাকলে নামাজের সময় নামাজ আদায়,পূজার সময় পূজা উদযাপন করছেন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপিত হচ্ছে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth