এক অদম্য জয়ীতা নারী হোসনা বেগম: পেয়েছেন জননী নারী জয়িতা পুরস্কার

আহসান হাবীব নীলু, কুড়িগ্রাম :
প্রমত্তা নদী দুধকুমার ভেঙ্গেছে বসতভিটা, আবাদি জমি।
করেছে বাড়ী ছাড়া উদ্বাস্তু। হয়েছেন নি:স্ব, রিক্ত ও অসহায়। নদীর
ভাঙ্গনে সর্বগ্রাসী ক্ষুধায় সবকিছু হারিয়ে একটু মাথা
গোজার ঠাই পেতে স্বামী,সন্তান নিয়ে ঘুরেছে অন্যের দ্বারে
দ্বারে। এক সময় সে ঠাই মেলে বাবার বাড়ী এলাকা কুটি
পায়রাডাঙ্গায় এক আত্মীয়র বাড়ীতে। অদম্য নারী হোসনা
বেগম। জন্মই যেন তার দঃখের সাথী। একসময় সুখের সংসার
ছিল তার। কিন্তু দুধকুমার নদীর ভাঙ্গনে চোখের সামনে ঘর-বাড়ী
জমি জমা সব হারিয়েছে। কিন্ত হোসনা বেগম থেমে থাকা
গৃহবধু নয়। মনের মধ্যে কঠিন এক জেদ। একদিন সে ঘুরে
দাঁড়াবে । সংগ্রামী জীবনের জন্য শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আত্মীয় বাড়িতে অস্থায়ী ঠাঁই মিললেও সন্তান আর স্বামীকে
নিয়ে অভাব তাদের পরিবারে ছিল নিত্য সংগী। ক্ষুধার জ¦ালায়
অস্থির পরিবারের মানুষগুলোর। কর্মহীন সবাই। কিনতু জীবন তো
থেমে থাকার নয়। নিজে না খেয়ে সন্তানদের খাইয়ে, কখনো
আধপেটা অথবা উপোস দিন কাটে তাদের। রাত্রি কাটে ক্ষুধার
জ্বালায় ছটফট করে আর অনিশ্চিত, দুর্দিন ও দুর্ভাবনায়। মনে
মনে আশা করে এই দুর্দিন থাকবে না। প্রহর গুনে সুদিনের
আশায়। তারপর দিনের আলো ফুটলে কাজের সন্ধানে ছুটে চলা।
ঠিক সে সময় আলোক বর্তিকা হিসেবে তাদের সামনে
হাজির হয় স্থানীয় মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি নামের
একটি বেসরকারী সংস্থা। হোসনার মনে নেই দিন তারিখের
কথা। কয়েক বছর আগে এক সকালে স্থানীয় বেসরকারী সংস্থা
মহিদেবের কর্মকর্তারা দু:স্থ্য, অসহায় পরিবার বাছাইয়ে
এলাকায় একটি উঠোন বৈঠক করে। বাছাই করা হয় হোসনার
পরিবারকে। হোসনা স্বামী ইসলাকে মহিদেবের কর্মস্ধসঢ়;ংস্থার
কথা বললে তিনি তাতে সম্মতি দেন। শুরু হয় হোসনার স্বপ্নের
পথে যাত্রা। মহিদেবের আর্থিক সহায়তায় শুরু করেন ছাগল,
হাঁস, মুরগী পালন। একে একে গড়ে তোলেন ছাগল আর হাঁস
মুরগীর খামার। স্থানীয় পাইকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তার খামার
থেকে হাঁস,মুরগী কিনে নিয়ে যায়। এতে তার ভালোই আয়
হয়। এর সাথে তার স্বামীর উপার্জন মিলে ধীরে ধীরে পরিবারের
স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। তাকে দেখে গ্রামের অনেক অসহায়
পরিবার কাজ করার স্বপ্ন দেখে। এক সময় হোসনা তার আয়ে ৫শক
জমি কিনে বসতভিটা গড়ে তুলেছে। সন্তানদের লেখা পড়া
করাচ্ছে। তার স্বপ্ন সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। তাদের
মানুষের মত মানুষ করাই তার স্বপ্ন।
হোসনার বেগম জানান দুর্ভোগ, দুর্দশা, দু:স্বপ্ন কাটিয়ে
স্বপ্নের হাটা শুরু করেছেন। তিনি জানান, যে বয়সে
সহপাঠীদের সাথে খেলার কথা ঠিক সময়ে তার অনিচ্ছায়
কালীগঞ্জ ইউনিয়নের সাহেবঘাট এলাকার ইসলামের সাথে বিয়ে
দেয় পরিবার। অল্প বয়সে সন্তানের মা হন। তারপর দুধকুমার নদীতে
সর্বস্ব হারিয়ে জীবনের দুঃস্বপ্ন দেখা শুরু করে। কিনতু
মহিদেব তাকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখায়। এজন্য ফিল্ড
ফ্যাসিলিটেটর মানবী রায়ের প্রতি অগাদ আনুগত্য তার। তবে
সে বিশ্বাস করে পরিশ্রম,সততা আর সংকল্প থাকলে মানুষ তার
সাফল্য পাবেই। সেটা যত সময়ই লাগুক। তার পরিশ্রমেই সে
পেয়েছে জয়িতা পুরুষ্কার। ঐ অঞ্চলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর মানবী রায় জানান, আমরা সহযোগীতা
করেছি মাত্র। তিনি তার ইচ্ছা, আগ্রহ, উদ্যোমে আজ সফল।
পেয়েছেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে সফল জননী নারী জয়িতা
পুরস্কার।
জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সোহেলী পারভীন জানান, তার
সফলতায় তাকে এ পুরস্কার দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন একজন
মানুষ যদি তার সংকল্প ঠিক রেখে পরিশ্রম করে তাহলে এক সময়
সাফল্য আসবেই। হোসনা বেগম এমনই একজন মহিলা। যিনি
সকলের কাছে অনুকরনীয়।