পৈত্রিক ভিটা থেকে উচ্ছেদের অভিযোগে অসহায় নারীর সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুর নগরীর রাধাবল্লভ এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা খাতুন পারিবারিক বিরোধের জেরে পৈত্রিক ভিটা থেকে উচ্ছেদ এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুর হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফাতেমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, তার পিতা মৃত ওমর আলীর মৃত্যুর পর তিনি দুই সন্তানসহ পৈত্রিক ভিটায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ২০১৪ সালে স্বামীর কাছ থেকে তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার পর তিনি বাবার সেবাযত্ন ও সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব একাই পালন করে আসছেন।
তবে বাবার মৃত্যুর পর থেকেই তার ভাইবোন ও ভাবীদের সঙ্গে পারিবারিক বিরোধ শুরু হয় এবং তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ফাতেমা জানান, ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ পারিবারিক বিরোধের একপর্যায়ে তার ভাই মোস্তাক আহমেদ ওরফে শেরু তাকে দা দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। তার দুই ভাবি বকুল বেগম ও রোকেয়া বেগম তাকে মারধর করেন এবং রোকেয়া বেগম তাকে গলা টিপে হত্যার চেষ্টা চালান বলেও অভিযোগ করেন তিনি। স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে তিনি কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন (জিআর নং–১৫৯/২৩)।
ফাতেমার দাবি, মামলার পর তার বিরুদ্ধেও মিথ্যা পাল্টা মামলা করা হয়, তবে তদন্তে তা অসত্য প্রমাণিত হওয়ায় পুলিশ ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করে। বর্তমানে তার মূল মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য তাকে ও তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর সিলেট ভ্রমণে গেলে তার অনুপস্থিতিতে ছোট বোনজামাই বাবলু প্রামাণিক ও অন্যান্য বোনেরা তার ঘরের তালা ভেঙে মূল্যবান জিনিসপত্র ও স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে নিয়ে যান। এ ঘটনায় তিনি কোতোয়ালি থানায় চুরির অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ফাতেমার ভাষ্য অনুযায়ী, ২৫ ও ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে পুনরায় তার ভাইবোনেরা তাকে মারধর করে এবং রাতের আঁধারে ঘর দখলের উদ্দেশ্যে দেয়াল নির্মাণের চেষ্টা চালায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কাজ বন্ধ করলেও, এরপরও তিনি আবারও হামলার শিকার হন এবং হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হন।
সংবাদ সম্মেলনে ফাতেমা অভিযোগ করেন, তার প্রতিবন্ধী সন্তানকেও অসহনীয় অবস্থার মধ্যে রাখা হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া, দোকান ভাড়া আত্মসাৎ, ঘর ভাঙচুর, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ একাধিকবার তাকে উচ্ছেদের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।
এ অবস্থায় তিনি স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। একইসঙ্গে তিনি নিজের ও সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, বিষয়টি পারিবারিক হলেও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।