১৬ কার্তিক, ১৪৩২ - ৩১ অক্টোবর, ২০২৫ - 31 October, 2025

নির্বাচিত পোষা পাখি দিয়ে পাখি শিকার

5 days ago
80


পীরগঞ্জ(রংপুর)প্রতিনিধি:

কলা পাতা, বেতের পাতা ও বাঁশের চিকন শলার মাধ্যমে  ৫-৬ ফুট উঁচু ডুলি(কূপের মত) আকৃতির ফাঁদ তৈরি করা হয়। এটি খাল বিলের পানির কাছাকাছি বসানো হয়। ওই ফাঁদের মধ্যে একজন শিকারি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন।

ওই ফাঁদে একটি বকের পায়ে সূতা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। শিকারি যখন ফাঁদের বকটির পায়ে সুতা টান দেয় তখন বকটি চেঁচামেচি করে উড়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে। তখন আশেপাশে থাকা অন্য ক্ষুধার্ত পাখি শিকারী পাখিটি বিপদে পরেছে বলে উদ্ধারের জন্য তার কাছে গিয়ে ফাঁদের উপর বসে। তখন ফাঁদের ভিতরে থাকা শিকারী পাখিটিকে কৌশলে ধরে ফেলে। এভাবেই বন্দি বক দিয়ে পাখি শিকারের মচ্ছব চলছে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে। প্রশাসন, বন বিভাগ, আইন থাকলেও পাখিদের জন্য কেউ দয়া দেখাচ্ছেন না।

উপজেলা বন কর্মকর্তা গাছ বিক্রি আর টেন্ডার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এদিকে বনের পাখি অসাধু শিকারী চক্রের হাতে ধরা পড়ছে তার কোন খবর নেই। উপজেলায় এখন পর্যন্ত কোন শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে দিন দিন শিকারিদের সংখ্যা বাড়ছে।

খোঁজনিয়ে জানাগেছে, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে অসংখ্য খাল-বিল রয়েছে। এসব জায়গায় দেশী পাখীসহ শীত মৌসুমে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এলাকায় বক, জল হাঁস, জল পিঁপি, ডাহুক ও মাছরাঙাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সমাগম ঘটে।

দীর্ঘদিন থেকে ফাঁদ পেতে বকসহ নানান প্রজাতির পাখি শিকার করে আসছে একটি অসাধু চক্র। এদের  ফাঁদে প্রতিদিন আটক হচ্ছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েকটি বিল ঘুরে দেখা যায়, শিকারীরা পাখি ধরার ফাঁদ দিয়ে পাখি শিকারে ব্যস্ত। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিকার করা এক জোড়া বক ৩ থেকে ৪শত টাকায় বিক্রি হয়। এক একটি শিকারী দল প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ জোড়া বক ও সম পরিমাণ অনান্য পাখি শিকার করে।

এলাকার সচেতন ব্যাক্তিরা মনে করেন, অতিথি পাখি প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশের বন্ধু। অতিথি পাখি শুধু জলাশয়ের অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণ ও বাস্তসংস্থানের উপকার করে। পাখিরা পোকা খেয়ে কৃষিক্ষেতকে আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। অথচ পাখিগুলো রক্ষার কোন উদ্যোগ নেই।

বন্যপ্রাণী(সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী, পাখি হত্যার দায়ে সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে। আবার কোন ব্যাক্তি পাখির মাংস, দেহের অংশ সংগ্রহ করলে বা ক্রয়- বিক্রিয় করলে বা পরিবহন করলে তিনিও অপরাধী বলে গণ্য হবেন। এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা ৩০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। আবার অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে, এই উপজেলায় পাখি শিকারী থাকলেও আইনের প্রয়োগ দেখা যায় না।

পীরগঞ্জ উপজেলার বিশিষ্ট নাগরিক ও সমাজচিন্তক হাবিবুর রহমান পল্টন বলেন, 'সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত গ্রামীণ পরিবেশকে পাখির নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত করা গাছ লাগানো, জলাশয় সংরক্ষণ, কীটনাশক কমানো এবং মানুষকে প্রকৃতিপ্রেম উদ্বুদ্ধ করা।'

তিনি মনে করেন, পাখি নিধন বন্ধে আইন প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও পাখির মাংস ভোজন নিরুৎসাহিত করা জরুরি। তবেই গ্রাম হবে পাখির অভয়ারণ্য, আর আমরা হব প্রকৃতির রক্ষক।

উপজেলা বন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, 'আমি পীরগঞ্জে অল্পদিন হলো এসেছি, পাখি শিকারের বিষয়টি আমার জানা নেই। পাখি শিকারের বিষয়ে আমাকে কেউ তথ্য দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।'

এলাকাবাসীর দাবি, প্রশাসনের উচিত পাখি শিকার বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া বা প্রচলিত আইননুযায়ী শাস্তি নিশ্চিক করা। অতিথি পাখিরা নামেই শুধু অতিথি নয়, নির্বিচারে হত্যার হাত থেকে রক্ষা করে অতিথীর মর্যাদা দেওয়া উচিত।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth