২৩ কার্তিক, ১৪৩২ - ০৮ নভেম্বর, ২০২৫ - 08 November, 2025

রংপুরে হার্টের রিং পড়াতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

5 hours ago
24


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রংপুরের কমিউনিটি (ডক্টরস) হাসপাতালে এক রোগীর হার্টের রিং পড়াতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় প্রতিবাদ করতে গেলে মারধরের শিকার হন রোগীর স্বজনরা। হাসপাতালের বাহিরে ভারাটে গুন্ডা নিয়ে লোহার পাইপ, বাশ, হকস্ট্রিক নিয়ে ছিলেন তারা। এ ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার রাতে।

জানাযায়, বুধবার রাত ১২টার দিকে বুকে ব্যাথা নিয়ে কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য মোকছেদুল ইসলাম (৫০)। বৃহস্পতিবার বিকেলে রোগীর হার্টে রিং পরানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

স্বজনদের অভিযোগ, পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক একজনের স্বাক্ষর নিয়ে তড়িঘড়ি রোগীর অপারেশন করে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। পরে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হলে ব্যাপারটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন তারা। প্রতিবাদ জানাতে গেলে রোগীর স্বজনদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে মরধর করা হয়। এঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির তৈরি হয় পুরো হাসপাতাল জুড়ে। পরে পুলিশ এসে এক ঘন্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকের অবহেলা ও দালাল চক্রের প্রতারণায় মকসেদ আলীর মৃত্যু হয়েছে। হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে বুধবার রাতে মকসেদ আলীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসক মো. আবু জাহিদ বসুনিয়া তার এনজিওগ্রাম করেন। এ সময় রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে ভুল বুঝিয়ে একটি বন্ডে স্বাক্ষর করিয়ে দ্রুত রিং পরানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক। অপারেশন চলাকালীন অবস্থায়ই মকসেদ মারা যান বলে পরিবারের দাবি।

স্বজনদের অভিযোগ, রোগী মৃত্যুর পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃতদেহকে আইসিইউতে জীবিত হিসেবে প্রদর্শনের চেষ্টা করে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনরা জোরপূর্বক আইসিইউতে প্রবেশ করলে মকসেদকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। মুহূর্তেই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে সম্প্রচার করা হলে হাসপাতালের কর্মচারী ও তাদের সহযোগীরা স্বজন ও উপস্থিতদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এতে কারমাইকেল কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ অনেকে আহত হন।

নিহতের ছেলে শাফিউল ইসলাম বলেন, “অপারেশন রুমে শুধু বাবার ‘আ আ শব্দ শুনছিলাম। পরে যখন আইসিইউতে নেওয়া হয়, বাবা কোনো নড়াচড়া করেননি। আমরা বুঝে গেছি তখনই বাবা মারা গেছেন। কিন্তু হাসপাতাল তা গোপন করে।

নিহতের শ্যালক হুমায়ুন কবির বলেন, “আইসিইউতে ঢুকে দেখি আমার দুলাভাই অনেক আগেই মারা গেছেন। আমি ফেসবুকে লাইভে গেলে হাসপাতালের পেটোয়া বাহিনী আমার ওপর চড়াও হয়।

তিনি আরও বলেন, আমি একটা কথা বলেছিলাম হাসপাতালের পরিচালককে, আপনারা কার বন সই নিয়েছেন, তিনি কোন উত্তর দিতে পারে নাই। উপওে থেকে আমাকে টেনে হেচওে নিচে নামায় আরও ৫০-৬০জন মিলে বলে এ বেটাকে মারো। আজকে শেষ করবো। আমার মোবাইলটা নিয়ে চলে গেলো তারা। তার পরে আমাকে তারা মারতে মারতে আমার পরনে থাকা পাঞ্জাবি ছিড়ে যায়।

এ ঘটনার পর রাত ৯টার দিকে এলাকাবাসী হাসপাতাল ঘেরাও করে দোষীদের শাস্তি দাবি করে। স্থানীয়রা বলেন, হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত একটি দালাল চক্র প্রায় দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে অপারেশনের ব্যবস্থা করেছিল।

অন্যদিকে, হাসপাতালের পরিচালক মেরাজ মহসিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই জড়িত নয়। রোগী নিজেই পরামর্শ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। আমরা কেবল অপারেশন থিয়েটার ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলাম। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আইসিইউতে নেওয়া হয় এবং সেখানে মারা যান। পরে স্বজনরা জোর করে প্রবেশ করে ফেসবুকে লাইভে যান।

ঘটনার পর রাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের দোষ ঢাকতে এক প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করে, যা নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।

এলাকাবাসী ও স্বজনরা দ্রুত ঘটনাটির নিরপেক্ষ তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও দালাল চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth