মা-মেয়েকে একসাথে ডিভোর্স দিলেন শশুর-জামাই! ঈদে নতুন বিয়ে করে আনন্দে মাস্টারমাইন্ড স্বামী

মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মিলনপুর ইউনিয়নে শশুর-জামাই মিলে একইসাথে নিজ নিজ স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ওই গ্রামে তোলপাড় শুরু হয়েছে। নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে মা-মেয়েকে ডিভোর্স দেওয়ার পর ঈদ আনন্দ করতে বিয়ে করে নতুন বউ ঘরে তুলেছেন মাস্টারমাইন্ড রকিবুল ইসলাম রকি (৪২)। রকিবুল ইসলাম জামায়াতের সাবেক ওয়ার্ড সেক্রেটারি এবং বর্তমানে জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন মিলনপুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে নিজ পরিবারের স্ত্রী এবং সন্তানের সাথে অমানবিক আচরণ-নির্যাতন চালিয়ে ডিভোর্স দেওয়ার মতো মানসিকতাকে ক্ষমতার অপব্যবহার বলছেন সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর বাজারে ঔষুধ বিক্রেতা এবং জামায়াত নেতা রকিবুল ইসলাম রকি স্থানীয় জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং নিজ গ্রামের মহল্লা কমিটির সেক্রেটারি।
৫ আগষ্টের পর দেশের পরিবেশ এবং পেক্ষাপট পরিবর্তনের পর ভয়ংকর হয়ে উঠেন এই রকিবুল। নিজ ব্যক্তি জীবনের সুখের আশায় অনার্স পড়ুয়া মেয়েকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে এক বয়স্ক ছেলের সাথে বিবাহ দেন। বিয়েতে তার মেয়ের অসম্মতি থাকলও সেটা গুরুত্ব দেননি বাবা রকিবুল। পরে মেয়ের সংসারে মনোমালিন্যের শুরু মেয়ে সেখানে সংসার করতে অস্বীকৃতি জানান, এতে রকিবুল ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়ের মা অর্থাৎ নিজ স্ত্রীকে মৌখিক তালাক দেন। এরপর বিষয়টও সমাধানের জন্য স্থানীয় মসজিদে রকিবুলের শশুরবাড়ীর লোকজনসহ একটি বৈঠকও হয়। সেখানে স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তিরা রকিবুল ইসলামকে তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে অনুরোধ করলেও তিনি দ্বিমত পোষণ করেন। পরে একপর্যায়ে মাস্টারমাইন্ড রকিবুল তার মেয়ের জামাইকে সাথে নিয়ে আদালতে গিয়ে একসাথে নিজ নিজ স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন। বিষয়টি জানতে পেরে পরে মা-মেয়ে সমাজের দায়িত্বশীলদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সমাধান না পেয়ে আদালতে মামলা করেছেন। এদিকে ঈদের আগেই নতুন বড় ঘরে তুলেছেন রকিবুল ইসলাম (রকি)।
এ বিষয়ে রকিবুল ইসলাম রকির স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, আগে মাটির ঘরে দিনযাপন করেছি। বাড়িতে গরু পুষে, অনেক কষ্ট দিনযাপন করে নতুন বাড়ি করেছি। যখন সুখের সময় আসলো তখন সে পরকীয়া প্রেমিকাকে বিয়ে করতে আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট করলো। সবগুলো ওর আগে থেকেই পরিকল্পনা (মাস্টারমাইন্ড) ছিল। জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর তার দাপট আরো বাড়ছে। গত ২ দিন হয় সে বিয়ে করেছে। আমি ন্যায্য বিচার চাই।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে রকিবুল ইসলাম রকির মেয়ে জানান, তিনি জয়পুরহাট সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। এসএসসি এবং এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে একটা ভালো সাবজেক্টে অনার্সে ভর্তি হয়েছেন। তিনি জীবনে ভালো কিছু করতে চান। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে বাবার আকস্মিক একটি সিন্ধান্ত। তিনি জানান, মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছি বিয়ে-সংসার করতেই হবে কিন্তু নিজের বয়সের চেয়ে ১৫ বছর বেশী বয়স্ক একটা লোকের সাথে কিভাবে দিন কাটানো যায়? আমি যদি মানসিকভাবে মরে যাই তাহলে এই জীবনের মূল্য কি? বিয়েতে আমাকে ব্লাকমেইল করা হয়েছে, আমাকে মতামত প্রদানের কোন সুযোগ দেওয়া হয় নাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রকিবুল ইসলাম রকি বলেন, শরিয়ত অনুযায়ী আমি ডিভোর্স দিয়েছি। মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বিষয়টা ভুক্তভোগীর মাধ্যমে মৌখিকভাবে জেনেছি। লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।