নীলফামারীর ঐতিহাসিক ‘ভিমের মা’র চুলা’ অস্তিত্ব হারাচ্ছে

সিএসএম তপন ,নীলফামারী:
নীলফামারীর এতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘ভিমের মার’ চুলা তার অস্তিত্ব হারাবার পথে। ভুমি দস্যুরা মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার কারণে দৃশ্যত খালে পরিণিত হয়েছে। সমতল মাটি থেকে প্রায় প্রায় ৪০ ফিট মাটির মাটির ঢিবি দিয়ে চারদিক বেষ্টিত ছিল এই ভিমের মা’র চুলা। স্থানীয়ভাবে এটিকে ‘ভিমের মা’র আকা বলে। বর্গাকৃতি স্থানটির দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় ১০ ফুট আকারের গর্ত দেখা যায়। প্রায় ৩ একর জমির এই স্থাপনাটি আজো কালের সাক্ষী হিসাবে রয়েছে। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ থেকে উত্তর পশ্চিম দিকে প্রায় ২ শ থেকে ৩ শ মিটার দুরে পুটিমারী ইউনিয়নের কাচারীপাড়া এস সেভেন টি টারসিয়ারী ক্যানেলের পাশেই অবস্থিত ভীমের মায়ের আকা। জেলার কয়েকটি ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে এটি অন্যতম।
কথিত আছে, মহাভারতের বিখ্যাত চরিত্র ভীমের মায়ের তৈরী একটি ঐতিহাসিক স্থানটি ভিমের মায়ের আকা হিসাবে পরিচিত। মহাভারতের যুদ্ধের সময় ভীমের মা কুন্তিদেবি নাকি এখানে সৈন্যদের জন্য রান্না করতেন; সে কারণেই এই চুলা তৈরী করা হয়েছিল। জনশ্রæতি রয়েছে, রান্নার ভাতের মাড়ের ¯্রােত যেয়ে একটি নদী সৃষ্টি হয়েছিল। ওই নদীটির নাম ‘মার গলার নদী’। শুকনা মওসুমে নদীটির পানি থাকে না। এদিকে লেখক নাসির উদ্দিনের ‘নীলফামারীর ইতিহাসে’ জানা যায়, আদিকালে কিশোরগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুশা গ্রামের অধিপতি ও যোদ্ধা হজরত মুশা শাহ্ ও ইসমাইল গ্রামের অধিপতি ও যোদ্ধা হজরত ইসমাইল শাহ্ প্রায়ই তাদের কর্তৃত্বের জন্য যুদ্ধে মুখোমুখি হতেন যোদ্ধা ভিমের সাথে। মাটির তৈরী দুর্গ তৈরী করে ভিম এ স্থান থেকেই যুদ্ধ পরিচালনা করতেন বলে জানা যায়।
রক্ষাণাবেক্ষন ও তদারকির অভাবে ঐতিহাসিক স্থানটির অবয়ব হারাতে বসেছে। এ স্থানটির মাটি কেটে বিক্রি করে প্রায় সব জমি দখলে নিয়েছে ভুমিদস্যুরা। ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায় ঐতিহাসিক স্থানটির জমি উদ্ধার করে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসাবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
পুটিমারী কাচারীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর থেকে ভুমিদস্যুরা স্থাপনাটির মাটি প্রায় কেটে নিয়ে যায়। বর্তমানে সামান্য একটু উচু স্থান রয়েছে এই ঐতিহাসিক স্থাপনায়। কিশোরগঞ্জ শিশু নিকেতন স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীনেশ চন্দ্র বলেন, নীলফামারী জেলায় যতগুলো প্রতœতাত্তি¡ক স্থাপনা রয়েছে এর মধ্যে এই নিদর্শণটি একটি অন্যতম। কিন্তু সরকারীভাবে এই জায়গাটি সংরক্ষণ তো দুরের কথা, এখানে একটি সাইনবোর্ডও দেওয়া হয় নাই। তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কিভাবে জানতে পারবে এই স্থানে একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা ছিল ?
কিশোরগঞ্জ বহু মূখি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম আজমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, নিঃসন্দেহে এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান। বর্তমানে ওই স্থানটিতে দৃশ্যমান কোন কিছুই নেই। আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য ওই স্থানটি দখলমুক্ত করে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী হকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, কিশোরগঞ্জে এরকম একটা ঐতিহাসিক স্থান ছিল সেটি আমি জানতাম না। আমি সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে এ বিষয়ে প্রয়োজনিয় ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলব।