হত্যা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি!

জুলাই আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদ
পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি:
জুলাই আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার সকল আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল আদালত ওই আদেশ জারির পর পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের বাবা, মা সহ পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। খবর শোনার পরই আবু সাঈদ এর বাবা মকবুল হোসেন বাড়ীর সামনেই ছেলে আবু সাঈদ এর কবরের পাশে গিয়ে নিরবে কাঁদতে শুরু করেন। বয়সের ভারে ন্যুজ মকবুল হোসেন যেন শব্দ করে কাঁদতেও পারেন না। ছেলেকে হারানোর পর শারীরিক শক্তিও তার ক্ষয়ে গেছে। গতকাল সোমবার রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে আবু সাঈদ এর বাড়ীতে গিয়ে সুনশান নিরবতা লক্ষ্য করা গেছে। গ্রামের মানুষজনও গ্রেফতারী পরোয়ানার খবরটি শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশের শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কোটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। দিনদিন আন্দোলনের রূপরেখা কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছিল। ওই সময় রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা আন্দোলনকে বেগবান করতে প্রতিবাদ সভা, মিছিল, মিটিং করছিলেন। ১৬ জুলাই বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ছাত্র পীরগঞ্জের আবু সাঈদ বেরোবির গেটে পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দেন। পুলিশও তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। সে সময় আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে গেলে ছাত্র-জনতার ব্যানারে সরকার পতনে একদফার ডাক দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট দুপুরে দেশের ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যান। অপরদিকে শহীদ আবু সাঈদ এর বড় ভাই রমজান আলী বাদী হয়ে ২৫ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে মামলা করেন। ওি মামলার তদন্তে আসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ একটি প্রতিনিধি দল। মামলার চার্জশীট দাখিলের পরই গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালত আবু সাঈদ হত্যা মামলার সকল আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে।
আবু সাঈদ এর বাবা মকবুল হোসেন বলেন, প্রায় এক বছর হলো আমার আদরের ছোট ছেলে কে আমার কবরের জায়গায় কবর দিয়েছি। এই এক বছরে তার কবর জেয়ারতে যত মানুষ এসেছে, তাতে আমার মন ভরেনি। তবে এতটুকু শান্তনা, দেশের মানুষ জালিম সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করায় আমি বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ সময় আবু সাঈদ এর মা মনেয়ারা বেগমও চুপচাপ ছিলেন।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার বাদী তাঁর বড় ভাই রমজান আলী বলেন, আমি ২৫ জনকে এজাহারনামীয় আসামী করে মামলাটি করেছিলাম। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি উচ্চ পদস্থ কমিটি নিয়ে পীরগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তদন্তের পর আরও ৫ জনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করলে ৩০ জন আসামি হয়। আজকে (গতকাল সোমবার) সকল আসামির বিরুদ্ধে মহামান্য আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় আমি সন্তুষ্ট। আমি আশা করেছিলাম আরও ৬ মাস আগে মামলার এই সিদ্ধান্ত আসার। আমি চাই যারা আমার ছোট ভাই আবু সাঈদ হত্যায় জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। আর যারা নিরপরাধ তারা যেন মামলা থেকে অব্যাহতি পায়।