তারাগঞ্জে আলোচিত মবের শিকার রুপলালের মেয়ে নুপুরের বিয়ে
প্রবীর কুমার কাঞ্চন, তারাগঞ্জ (রংপুর) :
আজ রবিবার বহুল আলোচিত মবের শিকার মুচি রুপলালের মেয়ে নুপুর দাসের বিয়ে। বিয়ের বাড়ি বলে কথা হলেও বাস্তবে নেই তেমন কোন আয়োজন। নেই ঢাক ঢোলের কাঠিতে বাজ্যযন্ত্রের বিয়ের বাজনা, নেই কোন আনন্দ উল্লাস। ডুকরে কাঁদছেন রুপলালের স্ত্রী-সন্তানেরা। মোট কথা শোকের মাঝেও বিয়ের আয়োজন।
গত ১০ আগস্ট রুপলালের মেয়ে নুপুর দাসের বিয়ের আর্শিবাদ অনুষ্ঠানের আয়োজিন ছিলো। এজন্য ৯ আগষ্ট বিয়ের আর্শিবাদ অনুষ্ঠানে রুপলালের বাড়িতে আসার জন্য রুপলালের জামাতা প্রদীপ দাস রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে বদরগঞ্জ হয়ে তারাগঞ্জের কাজীরহাট বাজারে এসে শ্বাশুর রুপলালের বাড়িতে আসার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে জামাতা প্রদীপ দাস রুপলালকে মোবাইল করে স্থানীয় কাজীর হাটে যেতে বললে সন্ধ্যার পরে রুপালাল জামাতাকে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য কাজীর হাটে যায়। জামাতা প্রদীপ দাসের সাথে কাজীর হাটে দেখা হওয়ার পর জামাতা প্রদীপের ভ্যানে করেই রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট বটতলা এলাকায় চোর সন্দেহে রুপলাল ও প্রদীপকে স্থাণীয় কয়েকজন মারধর করেন। পরে তাদের স্থানীয় বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গণপিটুনি দিলে ঘটনাস্থলে রুপলাল দাসের মৃত্যু হয়। গুরুত্বর আহত প্রদীপ দাস পরেদিন ১০ আগস্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। বাবা ও জামাইবাবুর মৃত্যুতে থমকে যায় নুপুরের বিয়ে। দীর্ঘ শোকের পর আজ রবিবার (২ অক্টোবর) রুপলালের মেয়ে নুপুর দাসের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে স্বল্প পরিসওে এমনটিই জানিয়েছেন রুপলালের স্ত্রী ভারতী দাস। তিনি বরেন, মেয়েকে তো বিয়ে দিতেই হবে। ধারদেনা করে মেয়েকে বিয়ে দিতে হচ্ছে। ওমরা (স্বামী) থাকলে কত যে ধুম ধামে মেয়েটার বিয়ে দিত। কপাল মন্দ আমার সবকিছু আমাকে ও আমার ছোট্ট ছেলেকেই সামলাতে হচ্ছে। মেয়ের বিয়েতে অনেকই সহযোগীতা করতে চেয়েছিল কিন্তু কেউ খোঁজ রাখে না। নুপুর রবিদাস বলেন, বাবা আমাকে ও আমার ভাই বোনদের অনেক আদর করতেন। অভাব বুঝতে দেননি কখনো। আমাকে ও আমার ভাইবোনদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। আমাকে ডিগ্রি পর্যায়ে পড়াশুনা করিয়েছেন। আজ আমার বিয়ে কিন্তু বাবা নেই, বাবা আমাকে আর্শিবাদ করতে পারবেনা। ভাবুনতো কতটা দুঃখ কষ্ট আমার ও আমার পরিবারের মাঝে। রুপলালের ছেলে জয় রবিদাস বলেন, একজন বাবাই বোঝেন মেয়ের বিয়েতে কি করতে হবে। কিন্তু আমি পারছিনা, বাব বেঁচে থাকলে ধারদেনা করে হলেও দিদিও বিয়ে খুবেই ধুম ধামে দিনে। আমরা সবাই আনন্দ করতাম, আর আজ আমাকেই দিদির বিয়ের সব কিছুই করতে হচ্ছে। উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মেহেড়ী হাসান শিপু জানান, রুপলালের মেয়ের বিয়ের জন্য দলের পক্ষ থেকে ৭০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ওই পরিবারের যেকোন সমস্যা হলে দলের পক্ষ থেকে সহযোগীতা করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবেল রানা জানিয়েছেন, রুপলালের বিয়ে খরজের জন্য উপজেলা তহবিল থেকে আগে ১ লাখ টাকা এবং সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া নুপুরের পড়াশুনার জন্য শিক্ষাভাতা, রুপলালের স্ত্রী ভারতী দাসের জন্য বিধবাভাতা এবং ছেলে জয়ের জন্য দোকানঘরের বরাদ্দ করা হয়েছে।