১৬ বছরেও কমেনি বেরোবির শ্রেণিকক্ষ সংকট ভোগান্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
মাহিম মুনতাসির (বেরোবি):
উত্তরের বাতিঘর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পরেও শ্রেণীকক্ষের সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য একই কক্ষ ভাগাভাগি করে পাঠদান করাচ্ছেন
কারমাইকেল কলেজের ৭৫ একর জমি নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে। বর্তমানে শিক্ষার্থী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজারে। শিক্ষক প্রায় দুই শতাধিক। কিন্তু প্রথম ৩ বছরে ৪টি একাডেমিক আর একটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ হলেও পরবর্তী সময়ে নতুন কোনো ভবন হয়নি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬টি অনুষদ, ১টি ইনস্টটিউিট, ২২টি বিভাগ থাকলেও সেই তুলনায় ক্লাসরুম নেই। প্রয়োজনের তুলনায় শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা অপ্রতুল। প্রায় প্রত্যেকটি বিভাগে কমপক্ষে ৫টি করে ব্যাচ রয়েছে সেখানে ক্লাসরুম রয়েছে কোন বিভাগের একটি, কোন বিভাগের দুইটি করে। যার ফলে এক ব্যাচের ক্লাস শেষ হতে না হতেই অন্য ব্যাচের এর শিক্ষার্থীরা ঐ ক্লাসরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে। এতে ক্লাস রুমে অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনযোগ যেমন বিঘ্নিত ঘটে তেমনি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরাও অস্বস্থি বোধ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২২টি বিভাগ ও একটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এর মধ্যে চারটি অনুষদের ১৬ বিভাগে শ্রেণিকক্ষসংকট রয়েছে।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, লোক প্রশাসন বিভাগে শ্রেণিকক্ষ রয়েছে দুটি।
জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শ্রেণিকক্ষ রয়েছে দুটি। অপর দিকে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের শ্রেণিকক্ষ রয়েছে তিনটি।
বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের অধীনে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ও ফাইনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শ্রেণিকক্ষ রয়েছে তিনটি।
কলা অনুষদের অধীনে বাংলা, ইংরেজি ও ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শ্রেণিকক্ষ রয়েছে তিনটি
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-০৩ এ চার ফ্লোরে মোট আটটি বিভাগ রয়েছে। ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের একটি মাত্র কক্ষ রয়েছে।
ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সিফানুর রহমান সিফান বলেন বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বিভাগ সর্বকনিষ্ঠ বর্তমানে চারটি ব্যাচ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা হয় কিন্তু আমাদের নিজস্ব একটিমাত্র শ্রেণিকক্ষ এবং মাঝে মাঝে আমরা গণিত বিভাগের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করি । চারটা ব্যাচ একটি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় । ব্যাচের (cr ) কে ক্লাস সিডিউল দেখে শ্রেণিকক্ষ ফাকা থাকলে তারপরে স্যারকে জানাই ক্লাস এর সময় নিতে হয়। ক্লাস রুমের তীব্র সংকটের কারণে আমরা চরম ভোগান্তি আছি। এই সংকট সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ ও বাস্তবায়ন চাই।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী বেলাল খান বলেন আমাদের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পাঁচটা ব্যাচের প্রায় ৩৪০ জন ছাত্র ছাত্রী আছে ।আমরা মাত্র দুইটি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করি। অনেক সময় দেখা যায় একই সময়েই তিনটা ব্যাচের ক্লাস থাকে তখন দুইটা ব্যাচ ক্লাস করে একটা ব্যাচ এক-দের ঘন্টা অপেক্ষা করে থাকে বাইরে ।এই সংকট সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ ও বাস্তবায়ন চই । একাডেমিক বিল্ডিং গুলো ছয় তলায় বর্ধিতকরণ করতে হবে তার সাথে নতুন একাডেমিক বিল্ডিং তৈরি করতে হবে বলে আমি মনে করি
শ্রেণিকক্ষসংকটের কথা স্বীকার করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শওকাত আলী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের "বরণ-বিদায় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে " প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন আমাদের চারটি একাডেমিক বিল্ডিং । এক নাম্বার বিল্ডিং ও দুই নাম্বার বিল্ডিং চার তলা করে আছে খুব শীঘ্রই আমরা টেন্ডার এ যাচ্ছি ছয় তলায় বর্ধিত করা হবে ।
তিনি আরো বলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা শুধু ৭৫ একর, যে জায়গায়টা দিয়ে শুরু করছিল সে জায়গাটুকুই আছে। এই জায়গা কিভাবে বাড়ানো যাই তা প্রকল্প গ্রহণ করছি এ প্রকল্পের মধ্যে দুইটি পার্ট আছে প্রথমটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক দ্বিতীয়টি ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্তৃক এ দুইটা পার্টের পরিকল্পনায় যদি আমরা পঞ্চাশ একর জমি নিতে পারি তাহলে স্থান সংকট দূর হবে।
আমরা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাথে ডিল করছি ১০৮০ কোটি টাকার একটা প্রজেক্ট প্রকল্প দিয়েছি এ প্রকল্প যদি আলোর মুখ দেখে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় অবকাঠামো থেকে শুরু করে ডিপার্টমেন্টের সংখ্যা ২২টি থেকে ৪৬ টি করার যে পরিকল্পনা ছিল তা বাস্তবায়ন হবে