৮ চৈত্র, ১৪৩১ - ২৩ মার্চ, ২০২৫ - 23 March, 2025

নীলফামারীতে প্রবাসে থেকেও একটি বিদ্যালয়ে কর্মরত! নিয়মিত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর:এলাকায় তোলপাড়

3 weeks ago
101


নীলফামারী প্রতিনিধিঃ

মেহেদী হাসান নামে এক প্রবাসী থাকেন সিঙ্গাপুরে কিন্তু চাকুরী করেন বাংলাদেশের একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে। মাগুড়া দোলাপাড়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় । বিদ্যালয়টি নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা মাগুড়া ইউনিয়নের মাগুড়া দোলাপাড়া গ্রামে। ওই প্রবাসী সিঙ্গাপুরে অবস্থান করেন তবুও তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলেছেন। তার আপন বড় বোন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা হওয়ার সুবাধে তিনি ওই সুবিধা নিচ্ছেন। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় গোটা উপজেলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। জানা গেছে, মাগুড়া ইউনিয়নের মাগুড়া দোলাপাড়া গ্রামে গত ২ হাজার সালে মাগুড়া দোলাপাড়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্টা করা হয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্টার ২২ বছর পর গত ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত করার পর ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ তানজিনা আক্তার লাইজু ও তার স্বামী বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি শাহ আলম পুরাতন শিক্ষকদের বাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নতুন করে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেয়া শুরু করেন। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী বেনবেইজ টিচার ডাটাবেজ অনুযায়ী সে সকল শিক্ষক ও কর্মচারীর নাম কমপক্ষে তিনটি সালের ডাটাবেজে সংরক্ষন থাকবে শুধুমাত্র তারাই এমপিওভুক্তির আওতায় আসবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার স্বামী শাহ আলম বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নিজের মর্জিমতো বেনবেজ টিচার ডাটাবেজে নাম সংরক্ষন করেন। সুত্রমতে বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা ১১ জন, কর্মচারী ৬ জন। কিন্তু বর্তমানে ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ৪ জন শিক্ষক এমপিও হলেও কর্মচারী ৬ জনই এমপিও ভুক্তির তালিকায় অন্তরভুক্ত হয়েছেন। এমপিও ভুক্ত চারজন শিক্ষক হলেন, সহকারী শিক্ষক গোলাম রব্বানী মন্ডল,সিন্ধুরানী,মোছাঃ শাহনাজ পারভিন ও প্রধান শিক্ষিকা মোছাঃ তানজিলা আক্তার লাইজু। কর্মচারী ৬ জনই এমপিওভুক্ত। ওই বিদ্যালয়ের নন এমপিওভুক্ত একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদ্যালয় এমপিও হলেও সাবেক সভাপতি প্রধান শিক্ষিকার স্বামী শাহ আলম আমাদের কাছে ১০ লাখ করে টাকা দাবি করে আমরা তার দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় তিনি আমাদের বেনবেজ শিক্ষক ডাটাবেজে পর পর তিনবার নাম না উঠানোর কারনে আমাদের আমাদের এমপিও হচ্ছেনা। শুনেছি তিনি আমাদের বাদ দিয়ে অন্য শিক্ষক নিয়োগ করে রেখেছেন। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে ৬ জন কর্মচারী এমপিওভুক্ত হয়েছেন তার মধ্যে একজন প্রধান শিক্ষিকার আপন ভাই মেহেদী হাসান। তাকে ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে গত ২০২৩ সালের ৯ই নভেম্বর যোগদান দেখানো হয়। তার এমপিও হয় ২০২৪ সালের ১ লা এপ্রিল। তিনি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করলেও বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর করে চলেছেন। অপর দিকে ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে মাহাবুল ইসলাম নামে একজনের কাছে ফাকা চেকে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে নিরাপত্তা কর্মী হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন। ওই নিরাপত্তা কর্মীও এমপিও হওয়ার পর সাবেক সভাপতি তার কাছে ৪ লক্ষ টাকা দাবি করেন। ওই নিরাপত্তা কমী সভাপতির দাবিকৃত ৪ লক্ষ টাকা দিতে অস্বীকার করায় তিনি নিরাপত্তা কর্মীকে মামলার ভয় দেখান। নিরাপত্তা কর্মী কোন উপায়ন্তর না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রধান শিক্ষিকা ও সাবেক সভাপতির নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা তানজিনা আক্তার লাইজুর সাথে কথা বললে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে আপনারা আমার স্বামী ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি শাহ আলমের সাথে কথা বলেন। প্রধান শিক্ষিকার কাছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীর উপস্থিতির হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তিনি বলেন, খাতা ভুল করে বাড়িতে রেখে এসেছি। পরে তিনি বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন। বিদ্যালয়টির সাবেক সভাপতি ও প্রধান শিক্ষিকা তানজিনা আক্তারের স্বামী শাহ আলমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা সিন্ডিকেট করে অপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি বলেন ভাই আমি মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের রুমে আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছি। আপনারা আসেন বিষয়টি মিটিয়ে ফেলি। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ওই বিদ্যালয়ের বিষয়ে অনেক অভিযোগ শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইননানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ওই বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মী মাহাবুল ইসলাম চেক সংক্লান্ত একটি বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগটির শুনানীর জন্য প্রধান শিক্ষককে ডেকে পাঠিয়েছি। প্রবাসী মেহেদী হাসান প্রবাসে থেকেও ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রবাসে থেকে বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে থাকার কোন বিধান নেই। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। কর্মরত শিক্ষকদের কাছে বিল প্রস্তুতের জন্য টাকা দাবি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth