মিঠাপুকুরে ৩ শিশুকে সাবালক দেখিয়ে মামলা দায়ের, তদন্ত ছাড়াই রেকর্ডভুক্তের অভিযোগ

মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের মিঠাপুকুরে ৩ শিশুকে সাবালক দেখিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়াও তদন্ত ছাড়াই মামলা রেকর্ডভুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। এছাড়াও নিজের একটি মাত্র ছোট আম গাছ কেটে অসহায় ১০ প্রতিবেশিকে ফাঁসানোর অভিযোগ রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলা চেংমারী ইউনিয়নের তিলকপাড়া গ্রামে। মামলার বাদী ওই গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে খোরশেদ আলম বকুল।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের রেয়াজ উদ্দিনের ছেলে হুজুর আলীর সাথে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে একই গ্রামের খোরশেদ আলম বকুলের। চলতি বছরের গত ২৪ ফেব্রুয়ারী আমবাগানের একটি গাছ কেটে ফেলাকে কেন্দ্র করে মিঠাপুকুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন খোরশেদ আলম বকুল। মামলায় ৩ শিশু ও ৩ নারীকে আসামী করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মিঠাপুকুর থানা পুলিশ তদন্ত ছাড়াই মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিরোধপূর্ণ জমিতে ছোট একটি আমগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তার পাশেই বাদী ও বিবাদীর বাড়ি।
আসামী পক্ষের হুজুর আলীর অভিযোগ করে বলেন, আমাদের পরিবারের লোকজনকে ফাঁসাতে খোরশেদ আলম বকুল নিজে গাছ কেটে ফেলেছে। এছাড়াও মারামারি ঘটনাও দেখিয়েছে মামলায়। কিন্তু এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে, তাদের অনেকেই সেদিন বাড়িতে ছিলেন না। তিনি আরও বলেন, একই ঘটনায় তিনি আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় কোন মারামারি ও গাছ কেটে ফেলার ঘটনা দেখাননি। মুলত. থানা পুলিশের সহযোগিতায় খোরশেদ আলম বকুল আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে দাবি করেন হুজুর আলী।
এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, মামলায় ৩ শিশুর বয়স বেশি দেখিয়ে আসামী করা হয়েছে। সেদিন তারা কেউ বাড়িতে ছিলনা। একজন ছিল স্কুলে, দু'জন পাওয়ার ট্রিলার নিয়ে মাঠে কাজে ছিলেন। তাদের জন্ম নিবন্ধন দেখে বয়স নির্নয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের প্রত্যেকের বযস ১৬ বছরের কম। কিন্তু মামলায় বিজয় মিয়ার বয়স দেখানো হয়েছে ২৫ বছর, নয়ন মিয়া ও আনোয়ার হোসেনের বয়স দেখানো হয়েছে ২১ বছর। বিজয় মিয়া স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, খোরশেদ আলম বকুল এলাকার প্রভাবশালী ও বিত্তবান। তাই তিনি প্রভাবখাটিয়ে ওই শিশু ও নারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন। অপরদিকে, আসামী পক্ষের লোকজন অসহায় ও হতদরিদ্র। তাদের কোনঠাসা করতে মামলাটি কৌশলে রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে। মামলা ঘটনাটি সত্য নয়।
মামলার বাদী খোরশেদ আলম বকুল বলেন, তারা আমার গাছ কেটে ফেলেছে। একারণে মামলা করেছি। ঘটনা সত্য না হলে পুলিশ কিভাবে মামলা রেকর্ড করল? মামলায় ৩ শিশুর বয়স বেশি দেখিয়ে আসামী করা হয়েছে কেন?-এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেনি খোরশেদ আলম। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিঠাপুকুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান ৩ শিশুর বয়স বেশি দেখিয়ে মামলা দায়েরের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মামলাটি তদন্ত চলমান রয়েছে। ওই ৩ শিশুর কাগজপত্রগুলো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। শিশুদের বয়স বেশি দেখিয়ে কিভাকে মামলা রেকর্ডভুক্ত হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলাটি ওসি স্যার রেকর্ডভুক্ত করেছেন। তারপর আমি তদন্ত শুরু করেছি।
মিঠাপুকুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, শিশুদের আসামী করার বিষয়টি বাদী ইচ্ছেকৃত ভুল করতে পারে। সেটির বাদির বিষয়, আমাদের নয়। তাহলে মামলা রেকর্ডভুক্তের আগে কেমন তদন্ত হলো?- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে এগুলো লক্ষ করা সুযোগ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে এ মামলা দায়ের করতে পুলিশ মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহন করেছে-এমন প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, আমরা ঘুষ খেলেতো এতোদিন চাকুরি করা লাগত না। চাকুরি ছেড়ে বাড়িতে বসে বসে খেতাম।