৯ আষাঢ়, ১৪৩২ - ২৪ জুন, ২০২৫ - 24 June, 2025

বোরো কাটার পাশাপাশি গোবিন্দগঞ্জে ক্লাস্টর আকারে চলছে আউশের ধানের চাষ ॥ উচ্চ ফলনশীল জাত আর কৃষি প্রণোদনায় আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা

4 weeks ago
147


গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধি:

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বোরো কাটার পর এবার ক্লাস্টর আকারে আউশ ধানের চাষ করছেন কৃষকরা। জমি পতিত ফেলে না রেখে আউশ ধান আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। অমন হয়না বন্যা প্রবল এমন নিচু পতিত জমিতেও আউশ চাষ করা হচ্ছে। বৃষ্টি নির্ভর তাই সল্প খরচ আর উচ্চ ফলনশীল জাত আশায় আউশ আবাদ চাষীদের কাছে এখন লাভজনক হয়ে উঠেছে। সরকারি কৃষি প্রনোদনায় পাওয়ায় এ ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক।

জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একদিকে চলছে বোরো ধান কাটা এবং মাড়াইয়ের কাজ অন্যদিকে চলছে আউশ চাষের প্রস্তুতি। বোরো-আমন ধান আবাদের মাঝামাঝি সময়ে পতিত পরে থাকা অনেক জমি এখন আউশ ধান চাষের আওতায় এসেছে। এতে করে জেলার দুই ফসলী জমি গুলো তিন ফসলী জমিতে পরিনত হয়েছে। বিগতবছর আউশ চাষে লাভবান হওয়ায় চলতি মৌসুমে জেলার গোবিন্দগঞ্জ পৌর সভার খলসী চাঁদপুরে শতাধিক কৃষক ক্লাস্টর আকারে প্রায় ১শ’৫৫ বিঘা জমিতে আউশ চাষ করছেন। ইতিমধ্যে বীজতলায় চারা উৎপাদন সম্পন্ন করা হয়েছে। চলছে জমিতে চারা রোপনের প্রস্তুতি। এছাড়াও একই পদ্ধতি অনুসরন করে উপজেলার শিবপুরের খিরিবাড়ী,নুরুল্লার বিলে ১শ ২০ বিঘা ও নাকাই ইউনিয়নের ৫০ থেকে ৬০ বিঘা জমিতে এবারি প্রথম আউশ ধান চাষ করছেন চাষীরা।

খলসী চাঁদপুরের কৃষক অর্জন চন্দ্র জানান অপেক্ষাকৃত নিচু ও বন্যা প্রবল হওয়ায় এসব জমিতে বেশি ভাগ সময় আমন হয়না,একারণে বোরো ধান কাটার পর দির্ঘ সময় পতিত পরে থাকতো এখন সে সব জমিতে আউশ চাষ হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। বীজ তলায় চারা বপনসহ ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া বলে এ ধনের সমন্বিত আবাদে লাভবান হওয়ার আশা চাষীদের। 

সুমিতা রানী বলেন কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সরকারি প্রণোদনা সহয়তা পাওয়ায়সহ ব্রি ধান-৪২,৪৩,৪৮,৮৯ ও কুদরত মত নতুন নতুন উফশি জাত আশায় এ এলাকার কৃষদের মাঝে আউশ ধান চাষের আগ্রহ বেড়েছে। এতেকরে  প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে আউশ ধান চাষের এলাকাও।গত বছর দুই বিঘা করেছিলাম এবার তিন বিঘা জমিতে আউশ চাষ করছি।এছাড়াও কৃষক আজিজুল ইসলাম এক ফসলি জমি দুই ফসলি আর দুই ফসলি জমি তিন ফসলি জমিতে পরিনত হচ্ছে।

গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা ব্লকের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা বিলাস কুমার ভট্টাটার্য বলেন বোরো চাষের পর জমি পতিত পরে থাকতো। এছাড়াও বন্যার ঝুকি থাকায় এসব জমিতে আমন চাষো হয়না। কৃষকদের কৃষি প্রণোদনাসহ প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষন ও পরামর্শ সহয়াতা দেওয়ায় গত বছর থেকে এসব জমি আউশ চাষে আওতায় এসেছে। সুধু খলসী চাঁদপুর এলাকায় এ বছর শতাধিক কৃষক ১৫৫ বিঘা জমিতে আউশ চাষ করছে। মাঠ পর্যায়ে এ চাষে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ধনেশ্বর জানান আমন হয়না এমন নীচু জমিতে কৃষককের মাধ্যমে ক্লাস্টর আকারে আউশ চাষে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরমাধ্য দিয়ে পরে থাকা জমি আউশের আওতায় আসছে। এতে করে এ এলাকার খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষকরা আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান নতুন নতুন উফশি জাত আশায় আউশের ফলন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকদের কাছে এ আবাদ এখন লাভজনক। এছাড়ায় সল্প জীবন কাল হওয়ায় বীজ তলায় চারা বপনসহ শুরু করে ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ফলন উৎপাদন হয়। এর খর গো খাদ্যের চাহিদা পূরনে বড় ভূমিকা রাখছে। আউশ ধান কাটার পর আম বা সবজীসহ অন্য ফসল করা যায়। আগামীতে এ আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন আউশ চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে কৃষি প্রণোদনাসহ প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষন ও পরামর্শ সহয়াতা দেওয়া হচ্ছে। রোগ,পোকা মাকড় এবং পাখির উপদ্রপ থেকে রক্ষা পেতে ক্লাস্টর আকারে আউশ ধানের চাষে চাষীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযাযী চলতি বছর ১৪শ’ ৪০হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষমাত্র নির্ধারণ করা হয়। তবে চাষ হচ্ছে ১৬শ’ হেক্টর জমিতে যা লক্ষমাত্রা ছারিয়ে গেছে। এতে করে কৃষকরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth