'কালেমার পতাকা' গানের শিল্পী লোকমান হাকিম: স্বীকৃতিহীনতা ও অবহেলায় কাটছে তার জীবন
নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:-
বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন ইসলামি সংগীতের কালজয়ী গান 'কোনো একদিন এ দেশের আকাশে কালেমার পতাকা উড়বে, সেদিন সবাই খোদারই বিধান পেয়ে দুঃখ-বেদনা ভুলবে'-এর গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী লোকমান হাকিম।
৭৩ বছর বয়সী এই প্রবীণ শিল্পীর কণ্ঠে এখন আর আগের মতো সুর ওঠে না, শরীরেও নেই সে জোর। এরপরও তাঁর রচিত সেই গানটি আজও সমানভাবে তরুণ ও সবুজ। মানুষের মুখে মুখে, মোবাইল ফোনে রিংটোন কিংবা ওয়েলকাম টিউন হিসেবে গানটি আজও কোটি মানুষের হৃদয়ে রয়েছে । সময়ের পরিক্রমায় মানুষের মনে গানটির প্রতি ভালোবাসা কমেনি এক বিন্দুও।
ইসলামি গানটির গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী লোকমানের জন্ম ১৯৫২ সালে। তিনি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের পারহরিনা গ্রামের মৃত মনির উদ্দীন আহমেদের ছেলে। বর্তমানে তিনি জেলার হাকিমপুর উপজেলার জাংগই গ্রামে বসবাস করছেন।
ছোটবেলা থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল এমন কিছু সৃষ্টি করা, যা মানুষ চিরকাল মনে রাখবে এবং সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সেই স্বপ্ন পূরণের তাড়না এবং বিশ্বখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর অনুপ্রেরণায় ১৯৯৬ সালে লোকমান হাকিম রচনা করেন জনপ্রিয় এই ইসলামি গানটি
সর্বপ্রথম পরিবেশিত হয় দিনাজপুরের 'বড় মাঠ'খ্যাত গোর-এ শহীদ ময়দানে। এরপরই এই সংগীত দিনাজপুর সহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে; দ্রুতই এটি ইসলামি চেতনার প্রতীক ও প্রেরণার উৎস হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
লোকমান হাকিম ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি নবাবগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব দেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি পেশা হিসেবে পল্লিচিকিৎসাকে বেছে নেন এবং দীর্ঘদিন ধরে গ্রামগঞ্জের মানুষকে সেবা দিয়ে আসছেন।
এক সময় এই ইসলামী গানটি মানুষের হৃদয়ে আলোড়ন তুললেও, এর স্রষ্টা লোকমান হাকিম বর্তমানে সব আলোচনার বাইরে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে গুণী এই মানুষটি আজ অবহেলা ও একাকী দিন কাটাচ্ছেন। তাঁর কালজয়ী সৃষ্টির জন্য মেলেনি কোনো সরকারি বা বেসরকারি স্বীকৃতি ও সম্মাননা। বার্ধক্যে দুর্বল এই শিল্পী এখন নিভৃতে দিন যাপন করছেন, অথচ তাঁর সুরারোপিত গান আজও সমাজে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।
স্থানীয় হোমিও চিকিৎসক কামরুজ্জামান বলেন, 'লোকমান ভাই আমাদের গর্ব। ছোটবেলায় তার গান শুনে বড় হয়েছি। এখনো তার সংগীত শুনলে মন ভরে যায়। আজ এমন একজন শিল্পী অবহেলা-অযত্নে পড়ে আছেন, এটি আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। আমরা চাই তাকে যথাযথ সম্মাননা দেওয়া হোক।'
পারহরিনা গ্রামের আবদুল কাইয়ুম সরকার বলেন, 'লোকমান শুধু শিল্পী নন, তিনি ছিলেন সফল রাজনীতিবিদও। তার গানে আমরা ইসলামি আন্দোলনের চেতনা পেয়েছি। এত বড় একজন মানুষ আজ অবহেলায় পড়ে আছেন-এটা কষ্টের বিষয়। আমরা চাই সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহল তার পাশে দাঁড়াক।'
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বৃদ্ধ লোকমান বলেন, 'এই গান আমার নয়, এটি আল্লাহর দান। মানুষের ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া।