নদীতে পানার ফুলের অপূর্ব শোভা, প্রকৃতির রঙে রঙিন সুন্দরগঞ্জের জলভূমি
হযরত বেল্লাল, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা):
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ে এখন প্রকৃতির এক অপরূপ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। পানার ফুলে ঢেকে গেছে নদীর বিস্তীর্ণ জলরাশি। সাদা-নীলচে পানার ফুলের সারি যেন নদীর বুকে আঁকা হয়েছে প্রকৃতির নিজস্ব রঙতুলিতে। ভোরবেলা কিংবা বিকেলের শেষ আলোয় এই ফুলের সৌন্দর্য আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
স্থানীয়রা জানায়, শরৎ ও হেমন্ত এই দুই ঋতুতে নদীর পানি কিছুটা কমে এলেই পানার ফুল ফোটতে শুরু করে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়টাই মূলত পানার ফুল ফোটার মৌসুম। সূর্যের আলো পড়লে একেকটি ফুল যেন হেসে ওঠে, আর তার প্রতিফলন পড়ে নদীর জলে যা চোখে পড়ে এক অনন্য দৃশ্য হিসেবে।
উপজেলার বিভিন্ন নদীপাড়ে প্রতিদিন এখন ভিড় জমাচ্ছেন মানুষজন। অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসছেন ঘুরতে, কেউ ছবি তুলছেন, আবার কেউ নদীর তীরে বসে উপভোগ করছেন প্রকৃতির এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
স্থানীয় কৃষক মোনারুল ইসলাম বলেন,
প্রতি বছর এই সময়টা নদী ভরে যায় পানার ফুলে। সকালে সূর্যের আলো পড়লে নদীর পানি আর ফুল মিলে এমন সৌন্দর্য তৈরি করে যে চোখ ফেরানো যায় না।
প্রকৃতিপ্রেমী শিক্ষক ফিরোজ কবির সরদার জানান, পানার ফুল শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, এটি জলজ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও ভূমিকা রাখে। পানার গাছ পানিতে অক্সিজেন সরবরাহে সহায়তা করে এবং অনেক ক্ষুদ্র প্রাণীর আশ্রয়স্থল হিসেবেও কাজ করে।
তবে স্থানীয় পরিবেশবিদরা বলছেন, নদীর নাব্যতা হারানো ও দূষণের কারণে অনেক জায়গায় এখন আর আগের মতো পানার ফুল দেখা যায় না। তারা মনে করেন, জলাশয় রক্ষায় স্থানীয় জনগণের সচেতনতা এবং কর্তৃপক্ষের নিয়মিত তদারকি থাকলে এই সৌন্দর্য আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
সুন্দরগঞ্জের প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলো তাই প্রতি বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন এই ফুল ফোটার মৌসুমের জন্য। নদীর বুকে পানার ফুলের হাসি যেন তাদের জীবনে এনে দেয় এক শান্তির ছোঁয়া ও প্রাকৃতিক ভালোবাসার অনুভূতি।