সন্তান আছে, তবুও বাবা-মা অসহায়, গ্রামে গ্রামে ঘুরে জিনিস বিক্রি করছেন বৃদ্ধ বাবা
মোঃ আব্দুল আজিজ:
দিনাজপুরের হিলির থানা মসজিদ থেকে বের হচ্ছেন এক বৃদ্ধ। মসজিদের গেটে রয়েছে দুইটি বস্তা। বস্তার উপর রাখা আছে ছোট ছোট পটে করে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা মূল্যের কিছু খাবার। এটিই তার ছোট দোকানের মূল পুঁজি। তাঁর জীর্ণ পোশাক, চোখে-মুখে বার্ধক্য ও ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। বৃদ্ধের সাথে কথা বলে হৃদয়বিদারক এক ঘটনা সামনে এলো। যেখানে সচ্ছল সন্তান থাকার পরেও চরম অবহেলা ও বাধ্যবাধকতার শিকার হয়েছেন এই বৃদ্ধ বাবা। শেষ বয়সে এসেও তিনি ছেলের মুখাপেক্ষী না হয়ে, বাধ্য হয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে সামান্য জিনিসপত্র বিক্রি করে নিজেদের অন্ন জোগাড় করছেন।
বলছিলাম দিনাজপুরের হাকিমপুর পৌরসভা এলাকার ছোট ডাংগাপাড়া গ্রামের আব্দুল মাবুদের কথা। তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে মেয়েকে কষ্ট করে বিয়ে দিয়েছেন। তারপর থেকে আর ছেলে কোন খোঁজ খবর নেন না। এমনকি তার সাথে কথাও বলেন না। দীর্ঘকাল ধরে তিনি পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলেছেন। পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের এই চরম অবহেলা বর্তমান সমাজের নৈতিক অবক্ষয়কে তুলে ধরে। যদিও বাংলাদেশে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন ২০১৩ কার্যকর আছে, যেখানে সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং ব্যর্থ হলে শাস্তির বিধান রয়েছে, তবুও সমাজে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
স্থানীয় কয়েক জন বলেন, ছেলেকে মানুষ করতে কোনো কমতি রাখিনি আব্দুল মাবুদ। নিজে না খেয়েও তাকে বড় করিয়েছে। এখন সে বড় হয়েছে, নিজের সংসার পেতেছে। আর তার প্রয়োজন নেই। তাকে নিজেদেরই দেখতে হয়, তাই বাধ্য হয়ে এই বয়সেও কাঁধে করে ভাংরি বিক্রি করছে। এই সামান্য রোজগারে কোনোমতে দু'জনের খাবার জোটে। আব্দুল মাবুদের মতো অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রের আরও সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন। সন্তানের অবহেলার শিকার এই বৃদ্ধ দম্পতির পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং সচেতন নাগরিকদের কাছে দাবি জানাচ্ছে এলাকাবাসী।
বৃদ্ধ আব্দুল মাবুদ বলেন, তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। কষ্টের সংসার ছেলে তাকে এবং তার স্ত্রীকে দেখাশুনা করে না। তাই বাধ্য হয়ে দীর্ঘ দিন থেকে নিজেই ভাংগারি বিক্রি করছেন। কষ্ট হলেও তিনি ছেলের জন্য দোয়া করেন, ছেলে যেন সুখে থাকেন।
হাকিমপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি নাজমুল হক বলেন, বৃদ্ধ ব্যক্তির বিষয়ে কথা হয় হাকিমপুর থানার ওসি নাজমুল হকের সাথে, তিনি বলেন, প্রায় সময় সময় দেখি এই বৃদ্ধ মানুষটি থানার মসজিদে নামাজ পড়ে। এর পর মসজিদের পাশে বসেই খাবার খায়। কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে আবার সে কাঁধে করে বস্তা দুইটি নিয়ে যায়। একদিন তাকে কিছু টাকা দিয়ে সহযোগীতা করেছি। এছাড়াও কোন সমস্যা হলে যোগাযোগ করতে বলেছি।