বদরগঞ্জে যমুনেশ্বরী নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন
বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি:
যমুনেশ্বরী নদীতে চলমান অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট ব্রিজ সংলগ্নে প্রধান সড়কে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় পরিবেশ রক্ষা কমিটি, কৃষক ইউনিয়ন, নদী বাঁচাও আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন। মানববন্ধনে নারী-পুরুষ, ছাত্রছাত্রী এবং ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় নানা শ্রেণি পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপস্থিত হন।তবে স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনকে মেনেজ করে প্রতিদিন বালু উত্তোলন করে দেদারসে বিক্রি করে বিক্রি করছেন প্রভাবশালী বালুখেকোরা।
এদিকে মানববন্ধনের খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার কুতুবপুর নাগের হাটে বেশ কয়েকটি বালুর পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে জরিমানা করেছেন উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা প্রশাসন।
জানা যায়, বদরগঞ্জ উপজেলায় চিকলী নদী, যমুনেশ্বরী নদী ও করতোয়া নদীসহ মোট চারটি নদী ৪৮ কিলোমিটার অংশে অন্তত ১৮ টি পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠছেন বালুখেকোরা।উপজেলার কালার ঘাট থেকে নাগেরহাট পর্যন্ত টানা ৪০ কিলোমিটার যমুনেশ্বরী ও চিকলী নদীর জেগে ওঠা চরে অন্তত ১৫ টি পয়েন্ট খুলে বালু উত্তোলন করেছেন শতাধিক বালু ব্যবসায়ীরা।
এ দিকে বদরগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে কুতুবপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট এলাকায় যমুনেশ্বরী নদীর জেগে ওঠা চর থেকে ১৭-১৮টি ট্রাক্টরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এই বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে নাগেরহাট, মাদাই খামার, সোনাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০ কোটি টাকার ব্রিজ। এ ছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে কৃষকের আবাদি জমি। বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার মানুষ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না।
এদিকে মধুপুর ইউনিয়নের রাজরামপুর নাওপাড়া এলাকায় যমুনেশ্বরী নদীর জেগে ওঠা চর থেকে প্রতিদিন দুই শতাধিক ট্রাক্টরে বালু ও মাটি বিক্রিসহ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এলাকার প্রভাবশালী সব্বুর মিয়া, মোয়াজ্জেমসহ কয়েকজন।স্থানীয় বাসিন্দারা অনেক বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ও ভূমি কর্মকর্তা বারবার অভিযোগ দিলেও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। অবৈধভাবে এই বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে রয়েছে নাওপাড়া গ্রাম, মাদ্রাসা, মসজিদ, এতিমখানা, মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও আবাদি জমি। প্রতিদিন গাড়ি চলাচলে সেখানে কাঁচা রাস্তার বেহাল অবস্থা হয়েছে। ধুলো-বালুর কারণে রাস্তায় বের হতে পারছেন না এলাকার মানুষ। বালু উত্তোলন করার জন্য বেশ কয়েকবার পদক্ষেপ নেন স্থানীয়রা। এজন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের উপর প্রভাবশালীরা মারতে আসছিলেন বলে জানা যায়। এদিকে কালুপাড়া ইউনিয়নের কালামেরতল মধ্যপাড়া এলাকায় বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী।
মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম ও বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী বলেন,যমুনেশ্বরী নদীতে দিনে ও রাতের অন্ধকারে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কয়েকটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে নদী থেকে বালু তোলায় নদীর স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। এতে যমুনেশ্বরী নদীর উপরে থাকা ব্রিজ হুমকির মুখে সহ নদীভাঙন বেড়ে গিয়ে দুই তীরের কৃষিজমি ও বসতঘর ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে, নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে এবং জলজ সম্পদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
তারা আরোও বলেন, অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর জন্য ব্রিজ ও নদী রক্ষা আইন বাস্তবায়ন এবং টেকসই খনন নীতিমালা অনুসরণ করার দাবি জানান। তারা আরও বলেন, নদী বাঁচলে কৃষি, পরিবেশ ও মানুষের জীবিকাও বাঁচবে তাই নদী রক্ষাকে জরুরি রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
অপরদিকে দিনাজপুর উপজেলার পার্বতীপুর থেকে আসা বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে নদীর পাড় কেটে বিক্রি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। নদীর পাড় কাটার কারণে হুমকির মুখে রয়েছেন নদীর পার্শ্ববর্তী বসতবাড়ি পাকা রাস্তা মসজিদ মাদ্রাসা ও আবাদি জমি। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেন প্রতিকার পাননি স্থানীয় বাসিন্দারা।
দামোদরপুর ইউনিয়নে চম্পাতলী এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে নদী খনন করে যে পাড় বাঁধা হয়েছিল। সেই নদীর পাড় গুলো কেটে বিক্রি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এছাড়াও চিকলী নদী থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বাল উত্তোলন করে বিক্রি করছেন ওই প্রভাবশালীরা।
মানববন্ধন শেষে একটি প্রতিনিধি দল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে অবিলম্বে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়।