১১ পৌষ, ১৪৩২ - ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ - 25 December, 2025

শরীরে ক্যান্সার, মনে চার মেয়ের ভবিষ্যৎ

4 hours ago
23


চিলমারী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি:

রাত নামলেই ঘরের বাতিটা নিভে যায়। কিন্তু মাজেদুল ইসলামের চোখে ঘুম নামে না। শরীর জুড়ে ক্যান্সারের যন্ত্রণা, তবু তার চেয়েও তীব্র এক ব্যথা বুকের ভেতর-চার মেয়ের মুখ। তিনি জানেন, তার নিঃশ্বাস থেমে গেলে এই চারটি জীবন অনিশ্চয়তার অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। তাই মৃত্যুকে ভয় নয়, তিনি ভয় পান মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের শরিফেরহাট ব্যাপারীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাজেদুল ইসলাম একসময় ছিলেন সংসারের ভরসা। ফার্নিচারের দোকানে কাজ করে ঘাম ঝরাতেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলেই মেয়েরা দৌড়ে আসত-এই দৃশ্যই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ। কিন্তু বছরখানেক আগে সেই স্বাভাবিক জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ ছায়া। ধরা পড়ে ক্যান্সার।

চিকিৎসকরা আশার কথাই শুনিয়েছিলেন-সময়ে চিকিৎসা হলে বাঁচার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনার নাম ছিল টাকা। ঢাকায় দুই মাস চিকিৎসা চললেও একসময় সব শেষ হয়ে যায়। চিকিৎসার খরচ জোগাতে বিক্রি করতে হয় বসতবাড়ির অংশ। শেষ পর্যন্ত অর্থাভাবে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে হয়-চিকিৎসার মাঝপথে থেমে যায় জীবনের লড়াই।

মাজেদুলের অসুস্থতার পর পুরো সংসারের ভার এসে পড়ে তার বৃদ্ধ বাবা রুহুল আমিনের কাঁধে। যে বয়সে বিশ্রামের কথা, সে বয়সে তিনি অটো চালিয়ে ছেলের চিকিৎসা ও চার নাতনির মুখে খাবার তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কাঁপা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘যা আছিল সব শেষ। এখন আর পারতেছি না।’

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মাজেদুলের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে আরও প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এই অর্থ জোগাড় করার কোনো পথ নেই। দিনমজুরের সংসারে ক্যান্সারের খরচ যেন অসম্ভব বোঝা।

মাজেদুলের স্ত্রী সাথী বেগম বলেন, ‘ডাক্তার কইছে ঠিকমতো চিকিৎসা হইলে ভালো হইতে পারে। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ। এখন মানুষের দয়ার দিকেই তাকিয়ে আছি।’

এলাকাবাসী আবু জাফর বলেন, ‘বাড়িভিটা বিক্রি করছে। গ্রামের মানুষ সামান্য সহযোগিতা করছে, কিন্তু এত বড় চিকিৎসা খরচ বহন করা সম্ভব না। সবচেয়ে কষ্টের বিষয়-চারটা মেয়ের ভবিষ্যৎ।’

সবচেয়ে বেশি নীরবতা ভাঙে বড় মেয়ে মাফিয়া আক্তারের কথায়। মাদ্রাসায় পড়ুয়া এই শিশুটি বলে,

‘আব্বা সুস্থ হইলে আমরা আবার আগের মতো থাকতে পারবো। আমি পড়াশোনা ছাড়তে চাই না।’

এই কথাগুলোই যেন মাজেদুলের বেঁচে থাকার শক্তি। বিছানায় শুয়ে থেকেও তিনি বারবার বলেন, ‘আমি মরতে চাই না, আমার মেয়েগুলার জন্য বাঁচতে চাই।’

চিলমারী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার (অ.দা.) মো. নাজমুল হাসান জানান, ক্যান্সারসহ কয়েকটি জটিল রোগের চিকিৎসায় সরকারি অনুদান দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করলে এককালীন ৫০ হাজার টাকা সহায়তা পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে দ্রুত সুপারিশের আশ্বাস দেন তিনি।

একজন বাবার জীবন আজ দয়া আর সহানুভূতির ওপর ঝুলে আছে। চারটি নিষ্পাপ চোখ আজও প্রশ্ন করে—আমাদের বাবাকে কি কেউ বাঁচাবে?

সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ: বিকাশ নম্বর: ০১৯২৭৩৩৪৬০৫

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth