১০ আশ্বিন, ১৪৩২ - ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ - 25 September, 2025

সব কাজেই টাকা চাই মোজাম্মেল হকের

1 week ago
69


সব কাজেই টাকা চাই মোজাম্মেল হকের
সব কাজেই টাকা চাই মোজাম্মেল হকের

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অভিযোগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে। নতুন যোগদান, বদলি, মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জুরসহ সব কাজেই টাকা দিতে হয় তাঁকে। ৯৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী জেলা সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী মো. মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

 

এক সূত্রে জানা যায়, ১২ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে থাকা মোজাম্মেল হক বিভিন্ন সময় চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনের নাম ভাঙিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে নিতেন। শুধু তা-ই নয়, বদলিজনিত ফরওয়ার্ডিং বাবদ তাঁকে টাকা দিতে হয়। মাতৃত্ব ছুটি মঞ্জুর ও যোগদানের সময়ও নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাঁকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে তিনি তাঁদের কর্মস্থলে যোগদান করতে দিতেন না।

 

এ বিষয়ে কমপ্লেক্সের ৯৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী জেলা সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, মোজাম্মেল হক ২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রধান সহকারী হিসেবে যোগ দেন। বিভিন্ন সময় তিনি চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনের নাম ভাঙিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে নিতেন। শুধু তা-ই নয়, বদলিজনিত ফরওয়ার্ডিং বাবদ তাঁকে টাকা দিতে হয়। মাতৃত্ব ছুটি মঞ্জুর ও যোগদানের সময়ও নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাঁকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে তিনি তাঁদেরকে কর্মস্থলে যোগদান করতে দিতেন না।

 

 

অভিযোগে বলা হয়, কর্মচারীদের উচ্চতর গ্রেড মঞ্জুর করার জন্য মোজাম্মেল হক প্রতিজন থেকে ৩ হাজার ৫ শ, জিপিএফ ঋণ উত্তোলনের জন্য গ্রহীতাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫ শ থেকে ২ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনোদন, ল্যামগ্রেন্ড, পেনশন, পিআরএল মঞ্জুর করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বাজেট শাখার কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে নেন। একই সঙ্গে কমিউনিটি ক্লিনিকের বিভিন্ন ভাউচার পাস করার জন্য নামে-বেনামে অর্থ আদায় করে নেন।

 

 

অভিযোগে ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, কর্মচারীদের নির্দিষ্ট সময় পিআরএল মঞ্জুর না করে তাঁদের হয়রানি করেন মোজাম্মেল হক। তবে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি পিআরএলের ব্যক্তিদের ফাইল ছাড় দেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে তিনি কুমিল্লা শহরে একাধিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, বাড়ি তৈরি করেছেন। রয়েছে গাড়িও।

 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, মোজাম্মেল হক ১২ বছর ধরে এই স্টেশনে রয়েছেন। টাকা ছাড়া তিনি কোনো ফাইল ছাড় দেন না। কারণে-অকারণে আমাদের ফাইল আটক রেখে তিনি হয়রানি করেন। টাকা দিলেই তিনি ফাইল ছাড়েন। ১২ বছরে তিনি এই স্টেশন থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে কুমিল্লা শহরে বাড়ি-গাড়ি করেছেন।

 

উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) মো. আবুল হাসেম সবুজ বলেন, মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৯৩ জন ভুক্তভোগী জেলা সিভিল সার্জনের কাছে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ করেন। মোজাম্মেল হক এই উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারী, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, কনসালট্যান্ট এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের ফাইল আটক রেখে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে নেন।

 

এ বিষয়ে প্রধান সহকারী মো. মোজাম্মেল হক বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। হাসপাতালের একটি পক্ষকে অনৈতিক সুবিধা না দেওয়ায় তাঁরা আমার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন, যাতে করে আমাকে এখান থেকে বদলি করা হয়। কুমিল্লা শহরে একাধিক ফ্ল্যাট, গাড়ি ও বাড়ির সম্পর্কে তিনি বলেন, কুমিল্লা রেসকোর্সে আমার একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। আমার স্ত্রী একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্বামী-স্ত্রী ব্যাংক থেকে লোন করে একটি ফ্ল্যাট ও বাড়ি করেছি। তবে আমার কোনো গাড়ি নেই।

 

কুমিল্লা জেলার সিভিল সার্জন আলী নুর মোহাম্মদ বশির আহাম্মদ বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। শিগগিরই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আমাদের প্রতিদিন/মাসফি

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth