নবাবগঞ্জে অভয়াশ্রম থেকেই অবাধে মাছ শিকার

মোঃ আব্দুল আজিজ, হিলি:
দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের গড়ে তোলা হয়েছিল মৎস্য অভয়াশ্রম। সেই অভয়াশ্রমে মৎস্য নিধনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মাগুর, শিং, শোল, বোয়াল, ট্যাংরা, বাইম, রিটা ও পাবদাসহ দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ রক্ষার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু দেশীয় বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ রক্ষা তো দূরের কথা, অভয়াশ্রমই রক্ষা করতে পারছে না মৎস্য অধিদপ্তর। সেখানে অনেকেই দখল করে ধান চাষ করে, এতে করে কিটনাশক প্রয়োগের ফলে মাছ মারা যাচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান উপজেলা মৎস্য বিভাগ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের ৫৮৮.২২ একর ও বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের ২৬৯.২৩ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত আশুরার বিল। নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলার মোট ৬টি মৌজার মধ্যে এ বিলের অবস্থান। দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের গড়ে তোলা হয়েছিল মৎস্য অভয়াশ্রম। এখানে প্রায় ৬০০ জন কার্ডধারী জেলে রয়েছে। তারাই এইসব অভয়াশ্রম দেখাশুনা করেন।এই অভয়াশ্রমে বাটা, চেলা, তাপসী/তপতী, বাইম, কৈ, কুঁচিয়া, পুটি, রুই, ইচা/চিংড়ি, টাকি, শিং, মাগুর, টেংরা, চোপড়া, পাঙ্গাস, আইড়, কালিবাউস, চেং, তেলাপিয়া, বালিয়া, গুলশা, শোল, মলা, পাবদা, কাতলা, ডারকা, ঢেলা, খলিশা, চান্দা, গজার, বোয়ালসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষার জন্য মৎস্য নিধন সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়। এমনকী স্থানীয় পর্যায়ে সুফলভোগীদের নিয়ে একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসবের তদারকি করেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া কেউ যাতে মাছ শিকার করতে না পারেন, সেজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করাও হয়। কিন্তু কাগজে-কলমে এসব নীতিমালা থাকলেও বাস্তবে তার চিত্র পুরো উল্টো। কেবলমাত্র একটি সাইনবোর্ড সাঁটানো ছাড়া মৎস্য অভয়াশ্রম রক্ষায় আর দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অভয়াশ্রম থেকে নির্বিচারে মাছ শিকার করছেন স্থানীয়রা। মাছ লুটের সঙ্গে অভয়াশ্রম রক্ষা কমিটিরও অনেক সদস্য জড়িত থাকার খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে এই অভয়াশ্রম মেরামত করার কথা। এখানে বিভিন্ন সময় দেশী মাছের পোনা অবমুক্ত করা হত। বর্তমানে বিলটিতে অনেকেই বিভিন্ন প্রকার নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ স্বীকার করছে। এতে দেশীয় বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ রক্ষা তো দূরের কথা, অভয়াশ্রমই রক্ষা করতে পারছে না মৎস্য অধিদপ্তর। বিলের পাড়ে অনেকেই জায়গা দখল করে, মাটি ভরাট করিয়ে ধান চাষ করে, এতে করে বিলের গভীরতা কমে গেছে। জন্মেছে নানা আগাছা। অনেকেই বিলটি দেখতে এসে হতাশ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
নবাবগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হানিফ উদ্দীন বলেন, বছরের দুইবার আশুরার বিল মেরামত করা হয়। সেই সাথে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করাও হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু অসাধু জেলে এই অভয়াশ্রমে মাছ স্বীকার করে থাকে। বিলটি যদি কোন বাজেট থেকে সংস্কার করা যায় তাহলে এই বিলে অনেক দেশী প্রজাতির মাছ সংরক্ষন করে রাখা যাবে।