বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষের হঠাৎ চেয়ারে বসার চেষ্টা, জানেনা সভাপতি ইউএনও! আল্টিমেটাম

জালিয়াতির মাধ্যমে পদ ধরে রাখতে নানা অপচেষ্টা
মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি:
পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গালস্ স্কুল এন্ড কলেজের বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম হঠাৎ সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহনের চেষ্টা করেছেন। চলতি মাসের ১৫ তারিখ দুপুরে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে তার চেয়ারে বসেন। কিন্তু বিষয়টি জানেনা ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার। পরে ইউএনও’র আল্টিমেটামে ওই প্রাতিষ্ঠান হতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। এরপর হতে আবার ঘা ঠাকা দিয়ে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন ওই বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহন করেন। এরপর মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম তুহিনকে সভাপতি করে কয়েক বছরে প্রতিষ্ঠানটি লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিনত করেন অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম। নিয়োগ বানিজ্য, অর্থ আত্মসাৎ, প্রাণনাশের হুমকি, পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল সরবরাহ, ভুয়া বিএড সনদসহ নানা অভিযোগ উঠলেও ক্ষমতার জোরে তেমন কিছু হয়নি।
কিন্তু চলতি বছরের ২৩ জুন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ও ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নানা অভিযোগের পেক্ষিতে প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকে বরখাস্ত করেন। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়- ৫ আগষ্টের পর থেকে অধ্যক্ষ মাহেদুল আলমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপিত হয়ে আসছিল। একারণে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন ও প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার স্থলে দায়িত্ব দেওয়া হয় ওই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষক রাজ্জাকুর রহমানকে। এরপর বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মাহেদুল আলমের নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির তদন্ত শুরু হয়। যার কার্যক্রম এখনও চলমান রয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ চলতি মাসের ১৫ তারিখে বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে তার চেয়ারে বসেন। কিন্তু বিষয়টি জানেন না প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার। পরে ইউএনও তার এই কার্যক্রম পরিচালনা করার কারণ জানতে চেয়ে আল্টিমেটাম দেন। এরপর হতে গা ঢাকা দিয়ে নানা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিদ্যালয়েও দেখা যায়নি বরখাস্তৃকত অধ্যক্ষ মাহেদুল আলমকে। ওই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রাজ্জাকুর রহমান বলেন, হঠাৎ বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম প্রতিষ্ঠানের এসে তার চেয়ারে বসেন। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার ভয়ে আমরা বাধা দেইনি। এরপর হতে তিনি লাপাত্তা হয়েছেন, বিদ্যালয়ে আসছেন না। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ইউএনও স্যার। তাকে দায়িত্ব দিলেতো তিনিই বুঝে দিবেন। তিনি গায়ের জোরে এসে বসার দরকার ছিলনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম আওয়ামী লীগের সময়কাল হতে গায়ের জোরে সবকিছু করেছে। পেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও এখনও তিনি গায়ের জোরে বিদ্যালয়ে দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে। তিনি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেন না। এতেকরে বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমরা প্রশাসনকে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি।
ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মুলতামিস বিল্লাহ বলেন, মাহেদুল আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। হঠাৎ তিনি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চেয়ারে বসতে পারেন না। এটির নিয়মকানুন রয়েছে। তিনি ইচ্ছেমত করতে চাইলেতো হবেনা। তার বিরুদ্ধ অনিয়ম ও দূর্নীতির তদন্ত চলমান রয়েছে। তিনি এখনও বরখাস্তকৃত। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চেয়ারে বসার কারণে তাকে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে, কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। এরপরও তিনি নিয়মের ব্যত্ময় ঘটালে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মাহেদুল ইসলামে সাথে কথা বলতে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। প্রায় ১০ দিন ধরে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। শুধুমাত্র একবার কল রিসিভ করে ‘আমি ঢাকায় আছি’ বলে কেটে দিয়েছেন।