রংপুরের ৬টি আসনে বিএনপির প্রার্থী যারা
চার দশক আগে হারানো আসন উদ্ধারে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নামের প্রাথমিক তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ তালিকায় প্রায় চার দশক আগে হারানো রংপুরের সংসদীয় ৬টি আসন পুনরুদ্ধারে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে লড়বেন রংপুরের ছয় নেতা। গতকাল সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ড) আসনে অংশ নেবেন গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সদস্য মোকাররম হোসেন সুজন।
গঙ্গাচড়া ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রংপুর-১ আসন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী মশিউর রহমান যাদু এই আসনে জয়লাভ করেন। পরে তার মৃত্যুতে ছেলে শফিকুল গনি স্বপন উপনির্বাচনে ওই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এবার ৪০ বছর পর হারানো এই আসনটি উদ্ধারে একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করলে দল থেকে মোকাররম হোসেন সুজনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
জানতে চাইলে মোকাররম হোসেন সুজন বলেন, বিএনপি স্থানীয় পর্যায়ে সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ। যদি কোনো রকম ষড়যন্ত্র ছাড়া নির্বাচন হয় এবং সাধারণ মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় তাহলে বিএনপির জয় শতভাগ নিশ্চিত।
রংপুর-২(বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলা) আসনে লড়বেন সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার। তিনি ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে লাঙ্গল প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে ভোট করেছিলেন; পরে বিএনপিতে যোগ দেন।
জেলার বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে রংপুর-২ আসন গঠিত। ১৯৭৯ সালে এই আসনে বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. ইলিয়াছ প্রামাণিক বিজয়ী হন। এবার এই আসনে আশার আলো দেখছে বিএনপি।
রংপুর-৩ ( রংপুর সদর উপজেলা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯ থেকে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড) আসনে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করবেন সামসুজ্জামান সামু। তিনি রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক।
রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯ থেকে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড ও সদর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রংপুর-৩ আসন। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এই আসনে বিএনপি শুধুমাত্র একবার জয় পেয়েছে। তাও আবার ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে। এখানে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন অ্যাডভোকেট রেজাউল হক সরকার রানা।
এবার এই আসনে নিজেদের অবস্থান বেশ শক্ত মনে করছেন বিএনপি। দল থেকে প্রার্থী ঘোষণার পর অনুভূতি জানিয়ে সামসুজ্জামান সামু বলেন, নির্বাচনে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছি। সবদিক বিবেচনা করে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আশা করছি, আগামী নির্বাচনে রংপুরে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে।
রংপুর-৪ (কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা ) আসন থেকে নির্বাচনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি শিল্পপতি এমদাদুল হক ভরসা। তার মাধ্যমে এবার হারানো আসনটি উদ্ধারে সুবর্ণ সুযোগ দেখছেন বিএনপি।
কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৪ আসন। ১৯৭৯ সালে এই আসনে বিএনপি প্রার্থী শিল্পপতি রহিম উদ্দিন ভরনা জয় পেয়েছিলেন। এছাড়া বাকি নির্বাচনগুলোতে জেলার অন্যান্য আসনগুলোর মতো এখানে কোমর সোজা করতে পারেনি বিএনপি।
জানতে চাইলে শিল্পপতি এমদাদুল হক ভরসা বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের শাসনামলে আমার বাবা রহিম উদ্দিন ভরসা বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর আসনটি জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে এই আসনের মানুষ কাক্সিক্ষত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিল। আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তাহলে এই আসন পুনরুদ্ধার হবে বলে জানান তিনি।
রংপুর-৫ মিঠাপুকুর) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। জামায়াত অধ্যুষিত এ আসনটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন সাধারণ ভোটাররা।
মিঠাপুকুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রংপুর-৫ আসন। স্বাধীনতার পর অধিকাংশ সময় এই আসন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। বিএনপি থেকে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে দৈনিক দাবানল সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এবার সেই হারানো আসন পুনরুদ্ধারে চমক দেখাতে চান অধ্যাপক গোলাম রব্বানী। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই আসন দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী ও জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে অন্যায়ভাবে তারা এতদিন ক্ষমতা দখল করে ছিল। দলের কর্মী হিসেবে আমি এ আসন থেকে মনোনীত হয়েছি। আশা করছি, এবার সম্মিলিতভাবে আমরা ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে পারব।
রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে নির্বাচন করবেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম। এ আসনে দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীদের তেমন তৎপরতা নেই।
পীরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন-৬। এই আসনে রয়েছে ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা। নানান কারণে এ আসনটি রংপুর অঞ্চলের মধ্যে বেশ আলোচিত। দল গঠনের পর থেকে টানা দুই দশক আসনটি দখলে ছিল জাতীয় পার্টির। এরপর ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দখলে ছিল এই আসন। এই আসনেও বিএনপি শুধু একবারই বিজয়ী হয়েছিল। ১৯৭৯ সালের নির্বচানে এখানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মতিয়ার রহমান চৌধুরী।
জানতে চাইলে রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন। মানুষ ভোট প্রদানের সুযোগ পেলে যারাই প্রতিদ্বন্দ্বী হোক না কেন আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।