১২ বৈশাখ, ১৪৩২ - ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ - 25 April, 2025

মিঠাপুকুরে একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে অতিরিক্ত টাকা ফেরতের নির্দেশ

আমাদের প্রতিদিন
8 months ago
192


মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি:

রংপুরের মিঠাপুকুরে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ অমান্য করে একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি জানার পর স্থানীয় এমপির  হস্তক্ষেপে অবশেষে অতিরিক্ত টাকা ফেরত পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে।

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী ক' তপসীলের আওতায় এমপিওভুক্ত কলেজ সমুহে ভর্তি ফিস ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ৫ হাজার টাকা, ঢাকার বাইরে ৩ হাজার, জেলা শহরে ২ হাজার এবং উপজেলা পর্যায়ে ১ হাজার ৫ শ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। এ হিসেবে উপজেলা পর্যায়ের কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফি নেওয়ার কথা এক হাজার পাঁচশ টাকা।   কিন্তু, মিঠাপুকুর উপজেলার নামকরা কলেজ সমুহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই নিয়ম মানছেনা।  বিশেষ করে মিঠাপুকুর মহাবিদ্যালয় ও শঠিবাড়ী মহাবিদ্যালয়ে গলাকাটা ফি আদায় করা হচ্ছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। দুই কলেজে আসন সংখ্যা যথাক্রমে মানবিক বিভাগে সাড়ে ৩ শ টি, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে একশ পঞ্চাশটি করে।  এর মধ্যে মিঠাপুকুর মহাবিদ্যালয়ে মানবিকে সব আসন পূর্ণ হলেও বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে শিক্ষার্থী খরা চলছে। বিজ্ঞানে ৮০ ও বাণিজ্য বিভাগে মাত্র ৩ জন ভর্তি হয়েছে। শঠিবাড়ী মহাবিদ্যালয়েও একই অবস্থা।  মানবিকে আসন পূর্ণ হলেও বিজ্ঞানে ৪৪ ও বাণিজ্য বিভাগে ৫ জন ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে  শঠিবাড়ী মহাবিদ্যালয়ে মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে ২ হাজার ৪শ ৫০ এবং বিজ্ঞান বিভাগে ২ হাজার ৫শ সত্তর টাকা আদায় করা হচ্ছে।  আর মিঠাপুকুর মহাবিদ্যালয়ে এক মাসের বেতন, স্কাউট, উন্নয়ন, বিভিন্নখাতসহ মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে ৩ হাজার ৩ শ এবং বিজ্ঞান বিভাগে ৩ হাজার ৫শ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও মিঠাপুকুর মহাবিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন ফরম ২৫০ ও শঠিবাড়ী মহাবিদ্যালয়ে ২০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে শঠিবাড়ী মহাবিদ্যালয়ে আবেদন ফরমের টাকা রশিদ ছাড়াই নেওয়া হচ্ছে। শঠিবাড়ী মহাবিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থী মনিরা খাতুন (ছদ্মনাম) বলে, ভর্তির আবেদন বাবদ ২০০ টাকার রশিদ পাইনি। বড়ভাইদের কাছে শুনেছি, ভর্তি হতে ১৫০০ টাকা লাগে। কিন্তু আমার কাছে কলেজ হতে রশিদ দিয়েছে ২৫৭০ টাকা। আমার দিনমজুর বাবা অনেক কস্টে টাকা জোগাড় করে দিয়েছেন।' একই কথা বলেছে গোলাম রাব্বানী,  পলাশ, স্বপ্না রানীসহ অনেক শিক্ষার্থী।

ভর্তি ফির নামে গলাকাটা টাকা আদায়ের ঘটনার কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপর চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। আবদুর রহমান নামে একজন অভিভাবক বলেন, হামরা গরীব মানুষ। অনেক কস্ট করি ছইলটাক পড়াশোনা করাইছু। কলেজোত ভর্তি করবার জন্য ম্যালা ট্যাকা নাগোছে। হামরা এতোগুলা ট্যাকা কোনটে পাই। কলেজ তো ট্যাকা কম নেয়না।'

শঠিবাড়ী মহাবিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক বলেন,  ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে অফিসিয়াল কাজ তেমন হচ্ছেনা। ১৮ জুলাই সরকারি নির্দেশে পাঠদান বন্ধ থাকলেও অফিস খোলা ছিল।  কিন্তু,  এখানে অফিসও খোলা হয়নি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নির্দেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফিও বেশি নেওয়া হচ্ছে।'

বিষয়টি রংপুর—৫ (মিঠাপুকুর) আসনের সংসদ সদস্য মো. জাকির হোসেন সরকারের কানে আসলে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার (২৯ জুলাই) মিঠাপুকুর ও শঠিবাড়ী মহাবিদ্যালয়সহ উপজেলার সব মহাবিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির অতিরিক্ত টাকা শিক্ষার্থীদের ফেরতের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিকাশ চন্দ্র বর্মণ।

এ ব্যাপারে রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও কৃষি মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘আমি বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমি তাৎক্ষণিকভাবে ইউএনকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলে দিয়েছি।’

 

 

 

 

 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth