টানা চার দিন পর তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক কর্মচারিরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার

এক মাসের মধ্যে আসামী গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতিতে
তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি:
টানা চার দিন পর তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও কর্মচারিরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে চিকিৎসা সেবা শুরু করেছেন। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও দায়িত্বরত কর্মকর্তা অনির্বাণ মল্ল্কি জানিয়েছেন এক মাসের মধ্যে দুষি ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য রংপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের আশ্বাসে তারা বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা শুরু করেছেন।
গত ১১ এপ্রিল তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্তঃসত্ত্বা নারী চিকিৎসককে মারধরের প্রতিবাদ ও জড়িতদের প্রেফতারের দাবিতে গত শনিবার থেকে চিকিৎসক ও কর্মচারিরা কর্মবিরতি শুরু করেন। পুলিশ ও চিকিৎসক সূত্রে জানাগেছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে করেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা প্রভাষক আতাউর রহমান বুকে ব্যাথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। এসময় হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত মৌ ওই রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। পরে তিনি অন্য রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে চলে যান। ওই সময় আতাউর রহমানের ছেলে উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাহমিদ সরকার তুর্য ও রংপুর জেলা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সদস্য তাওরাতসহ ৪-৫জন হাসপাতালে যান। এসময় তাহমিদ তার অসুস্থ বাবাকে চিকিৎসা সেবা না দিয়ে নারী চিকিৎিসক অন্য রোগীকে সেবা প্রদান করায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ওই চিকিৎসককে গালিগালাজ করা এক পর্যায়ে তার শরীরে আঘাত করার অভিযোগ এনে তাহমিদ, তাওরাতসহ ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে ওইদিন রাতেই থানায় মামলা করেন চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহান মৌ। মামলার পরের দিন শনিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল গেটে আসামীদের গ্রেফতার, সুষ্ঠ বিচার ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে কর্মবিরতির ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়ে কর্মবিরিতি পালন করেন তারা। এতে করে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নেরসহ আশ-পাশের উপজেলার থেকে শত শত সেবাপ্রার্থীরা চিকিৎসাসেবা না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েন। এদিকে গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) চিকিৎসকদের দেয়া মিথ্যা মামলা ও কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে জনদুর্ভোগ বন্ধের দাবীতে তারাগঞ্জ উপজেলা সর্বস্তরের মানুষের ব্যানারে বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়। মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ উপজেলার বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ অংশ গ্রহন করেন। মানববন্ধনে বক্তরা, ২৪ ঘন্টার মধ্যে দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে জনগনকে সাথে নিয়ে কঠোর কর্মসূচীর ঘোষনা দেয়া হবে বলে জানান। তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আবাসিক চিকিৎসক ও দায়িত্বরত কর্মকর্তা অনিবাণ মল্লিক বলেন, রংপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয় হাসপাতালে এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা এক মাসের মধ্যে অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার ও হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় চিকিৎকদের নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় কর্মবিরিতি প্রত্যাহার করেছি। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা না হলে আমরা আবারো কর্মবিরতি ঘোষনা করবো।
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা জন্য পুলিশ রয়েছে। পরিবেশ শান্ত রয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।