আমার কোন ওয়ারিস নাই বললেন, জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য

বায়েজীদ, পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা):
তিনি তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে পোষ্ট করেন— ‘আমি দিলারা খন্দকার (ব্যারিস্টার অ্যাট ল’), মাতা মৃত স্বপ্না খন্দকার, পিতা মৃত খন্দকার ওসমান গনি দুলু। পৃথিবীতে আমার কোনও ওয়ারিশ নেই। আমার মৃত্যুর পর যা কিছু সম্পদ আছে, তার ওছিয়তনামা করে রেখেছি। আমার কবর হবে ‘Barrister’s House’-এর পূর্ব পাশে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘বিঃ দ্রঃ আমার মৃত্যুর পর আমার ভাই আবু বকর সিদ্দিক পলাশ আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না, দাফনে অংশ নিতে পারবে না, কবরে মাটি দিতে পারবে না।’
তার এই স্ট্যাটাস মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ বিষয়টিকে পারিবারিক সংকট হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করছেন ব্যারিস্টারের মানসিক অবস্থা নিয়ে।
রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর–পলাশবাড়ী) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করেন এবং জোটের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল তার। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েও পার্টি চেয়ারম্যানের নির্দেশে তা প্রত্যাহার করেন।
ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বার-অ্যাট-ল সম্পন্ন করে দেশে ফেরেন। ২০০৯ সালে বার কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত হন এবং ২০১১ সালে হাইকোর্টে প্র্যাকটিসের অনুমতি পান। তার বাবা খন্দকার ওসমান গনি দুলু ছিলেন স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও জাতীয় পার্টি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি পলাশবাড়ী পৌর এলাকায় পরিচিত ‘শিল্পী ভোজনালয়’-এর মালিক ছিলেন।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুলু মারা যান। তার ৪০ দিন আগেই স্ত্রীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে ২০২৩ সালে নিজের সহায়-সম্পত্তির অধিকাংশ ছেলে আবু বকর সিদ্দিক পলাশ ও মেয়ে দিলারা খন্দকারের মধ্যে দলিলমূলে বণ্টন করে যান। তবে ভাগাভাগি নিয়ে পরবর্তীতে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এক পর্যায়ে শিল্পী তার ভাই ও প্রয়াত পিতার বিরুদ্ধে গাইবান্ধার আদালতে একটি মামলা করলেও সেটি খারিজ হয়ে যায়। এরপর বাবা-মা দুই জনের মৃত্যুর পর থেকেই ভাই-বোনের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চরমে ওঠে। স্থানীয়ভাবে এ নিয়ে বেশ কিছু ঘটনা আলোচনায় আসে।
স্ট্যাটাসের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার বলেন, ‘যা ঘটেছে, সেটাই জানাতে চেয়েছি। এর বাইরে কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে, ভাই আবু বকর সিদ্দিক পলাশ বিষয়টি নিয়ে প্রথমে মন্তব্য করতে চাননি। পরে তিনি জানান, আমরা দুই ভাই-বোনই বাবা-মায়ের আদরের সন্তান। তাদের সম্পদ বাবা মৃত্যুর আগেই বণ্টন করেছেন। তারপরও আপার সঙ্গে নানা বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি রয়ে গেছে। নানাভাবে চেষ্টা করেও সমাধান হয়নি।’
স্ট্যাটাসের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এটা নতুন নয়। এর আগেও তিনি একাধিক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। অনেক ঘটনা ঘটেছে, তারপরও আমি চুপ থেকেছি। এসব নিয়ে আমার কোনও অভিযোগ নেই, মন্তব্যও করতে চাই না।’
ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকারের এই স্ট্যাটাস এখন স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জাতীয় পার্টির তরুণ এই নেত্রী টেলিভিশনের টক শোতেও বেশ আলোচিত ছিলেন। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শিল্পীর পলাশবাড়ীর বাড়িতে একাধিকবার সফর করেছিলেন।
এরশাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দিলারা খন্দকার ছিলেন দলের উপদেষ্টা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য। তার মৃত্যুর পর নতুন কমিটিতে আর পদ পাননি। পরে ২০২০ সালে তিনি ‘জাতীয় পল্লী পার্টি’ নামে নতুন দল গঠন করেন—এরশাদের ‘পল্লীবন্ধু’ উপাধির সঙ্গে মিল রেখে।
শিক্ষাজীবনে তিনি এসএসসি পাস করেন পলাশবাড়ী পিয়ারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবং এইচএসসি পলাশবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে। পরে লন্ডনে গিয়ে এ-লেভেল সম্পন্ন করে ‘ল’-এর ওপর ডিপ্লোমা, এলএলবি ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে লিংকনস ইন থেকে বার অ্যাট ল সম্পন্ন করেন।