২৯ আশ্বিন, ১৪৩২ - ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ - 14 October, 2025

তারাগঞ্জের জয়িতা নাজমা বেগমের সাফল্যের গল্প

8 hours ago
51


তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি:

জয়িতা নাজমা বেগমের বিয়ের হয় ১৯৯৯ সালে তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামের রাজ্জার কাজীর সঙ্গে। সেসময় নাজমা বেগম নবম শ্রেণিতে পড়তেন। বিয়ের কয়েক বছরে আগে নাজমা বেগমের বাবর মৃত্যু হওয়ায় মায়ের অভাবের সংসারের জন্য বাল্য বিবাহ দিয়ে দেন তার মা। বিয়ের পর কথায় বলেনা, শ্বশুরবাড়ী মধুরহাড়ি, ঠিক সে রকমের প্রথম প্রথম তার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী, দেবর-ননদ, জা-ভাশুর, স্বামী সবাই আদর-স্নেহ করতেন। নাজমা বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে ২-৩ মাস ভালই কেটে যায় তার। কিন্তু বেকার স্বামীকে নিয়ে বিপদে পড়তে হয় তাকে। একটা সংসার করতে গেলে অনেক কিছ ুলাগে কসমেটিক, কাপড়, তেল-সাবানের যখন টান পড়লো তখন তিনি বুঝতে পারলেন আয়-রোজগার না থাকলে কিভাবে সংসার চলবে। এই চিন্তায় সব সময় নাজমা বেগম অস্থির হয়ে পড়েন। নাজমার বাবার বাড়ির পাশে ব্র্যাক অফিস থাকার তার পরিচিত  ব্র্যাকের শিক্ষা কমৃসূচীর এক অফিসারের সঙ্গে নাজমার দেখা হয়। তিনি নাজমাকে দোলাপাড়া গ্রামের একটি ব্র্র্যাক স্কুল আছে। কিন্তু সেই স্কুলের শিক্ষিকার পারিবারিক সমস্যার কারণে স্কুলের শিক্ষিাকার পেশা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যায়, সেই স্কুলে একজন শিক্ষিকা প্রয়োজন যদি করতে পারো তাহলে তুমি কাল থেকে স্কুলটি চালাতে পারো জানানে নাজমা রাজি হয়ে যায়। পরেদিন থেকে নাজমা ব্র্যাক স্কুলের শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান করেন। স্কুলের তিনি নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যায়। ২০০০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ। এরপরে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এইচ এস সি তে ভর্তি হন। তখন নাজমার প্রথম ফুটফুটে মেয়ের জন্ম দেয়। তারপর স্কুল শেষ হতে না হতেই ব্র্যাকে শিশু শ্রেণির জন্য কিছ ুসংখ্যক পি এস নিয়োগ দেয়ার কথা জানতে পেরে সেখানে আবেদন করেন এবং সেই পদে যোগদান করেন ২০০২ সালে। ।

কর্ম ও পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে পরিবর্তনের সঙ্গে উৎসাহিত হয়ে মনোযোগ দিয়ে কাজ করেন তিনি। সেখানে এক বছরের মধ্যে ৬ মাস ফিল্ডে এবং ৬ মাস বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা শহরে মৌলিক প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সমরিক নিয়ম-কানুন ,শূঙ্খলা এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতার কাজ সেখানোর কাজ করেন। একাজে ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনা করেও তিনি নতুন বিকল্প উদ্যোগ গ্রহণে সৃজনশীলতার পরিচয় দেন। নতুন কর্ম কৌশল, নীতিমালা ও পদ্ধতি আয়ত্ত করে কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রদর্শন করেন। ভুল ভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে অনুসন্ধান করে তা রুপান্তর মূলক করার চেষ্টা করেন। এসময় নাজমা বেগমের খোলা মনে নতুন ধ্যান ধারনা গ্রহন করেন এবং নিঁখুত ভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সংসারের জন্য নতুন নতুন কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করেন। একজনের পরিশ্রমের টাকায় কি আর সংসার চলবে এমন ভাবনা রোজ তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে অস্থির করে তুলতো। তারপরেও নাজমা বেগম তার বেতনের সামান্য কিছু টাকা জমিয়ে শ্বশুরের বন্ধক রাখা পুকুর ছাড়িয়ে নিয়ে নেন। তারপর সেই পুকুরে মাছ চাষের উদ্যোগ গ্রহন করেন। পরে তিনি ব্র্যাকের ঝন শাখা থেকে কিছু টাকা ঝন নিয়ে ও তার বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে এসে পুকুরে মাছ ছাড়েন। পরের মাসে বেতনের টাকা দিয়ে দুইশত হাঁস কিনে পুকুরে হাসের খামার গড়ে তোলেন। ভোরের দিকে উঠে রান্না-বান্নার কাজ শেষে করে স্বামীসহ হাঁসের খামারে গিয়ে তাদের খাবার ও যত্ন নিয়ে অফিসে ছুটে আসেন। আবার বিকালে অফিস ছুটির পরে হাঁসের খামারে গিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে একটি পরিপূর্ণ হাঁসের খামার গড়ে তুলেন। সেই হাঁসের খামার পুকুরে মাছ চাষ করতে থাকেন। সেখান থেকেই নাজমা বেগম সংসারে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেন। পরবর্তীতে নাজমা বেগমের মা আনোয়ারা বেগম নাজমা বেগমের মেয়েকে একটি ছাগল দেয়। সেই ছাগল পালনও করতে থাকেন তিনি। সেই মায়ের দেয়া ছাগল কয়েক বছর লালন পালন করে একটি ছাগলের খামার গড়ে তোলেন তিনি। ছাগলের খামারের বেশ কয়েকটি ছাগল বিক্রির টাকায় একটি গরু কিনে নিয়ে লালন-পালন করতে থাকেন। কয়েক বছর পর সেই গরুর খামার থেকে দুইটি গরু ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করে তার বেকার স্বামীকে টাকা দেন ব্যবস্থা করার জন্য। নাজমা বেগমের স্বামী আব্দুুর রাজ্জাক সেই টাকা নিয়ে একটি বাসের টিকেট কাউন্টার দেয়। পাশাপাশি নাজমা বেগম ও তার স্বামী হাঁসের খামার, ছাগলের খামার ও গরুর খামার দেখা শুনা করেন। নাজমা বেগম তার  উপার্জন দিয়ে নিজের দুই সন্তানকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে বড় মেয়ে রেমি আক্তার রংপুর সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট একম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করতেছে এবং ছোট মেয়ে রাফি আক্তার স্থাণীয়  একটি শিশু নিকেতনে অষ্টম শ্রেনীতে পড়ছেন। জয়িতা নাজমা বেগম মনে করেন , মানুষে পারে না এমন কোনকাজ নেই পৃথিবীতে। সততা ও নিষ্ঠা, সৃজনশীলতা, সার্বজনীনতা ও কার্যকারি তার সাথে কাজ করলে মানুষের ভালো কিছ ুকাজে, সংসাওে উন্নতি করা, সমাজের জন্য সন্তানকে সু-সন্তানকে গড়ে তুললে বিঘ্ন ঘটবে না। তার জলন্ত প্রমাণ আমি নিজেই। এভাবেই নাজমা বেগমের জীবনের পথচলা। বর্তমানে তিনি স্বামী সন্তান নিয়ে সুখেই দিনপার করছেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth