শৈশবের বন্ধন, সাফল্যের গৌরব শাহাজাহান কবীরকে সংবর্ধনা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুরের ব্যবসায়িক নেতৃত্বে নব্বই ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীর অর্জনে হারাগাছ দরদী দ্বিমুখী উচ্চ
বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।
রংপুরের মেট্রো চেম্বারের শাহাজান কবির গুরুত্বপূর্ণ পদ অর্জন করায় ১৯৯০ ব্যাচের বন্ধুরা মিলে সংবর্ধনা দেয়।
সোমবার রাত ১১ টায় হারাগাছ দরদী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে এ সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ সময় নব্বইয়ের দশকের বন্ধুদের মধ্যে সেই সোনালি দিনে হাসি, খেলা, দুষ্টুমি আর বন্ধুত্বের অবিচ্ছেদ্য গল্পে ভরে উঠে। নব্বই ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেছিলেন এক আবেগঘন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। তাঁদেরই সহপাঠী, সফল উদ্যোক্তা ও শিক্ষানুরাগী শাহাজাহান কবীর একেএস-এর সম্মানে সম্প্রতি তিনি রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আরএমসিসিআই)-এর গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
এই অর্জন শুধু তাঁর নয়— পুরো ব্যাচের, এমনকি বিদ্যালয়েরও এক অনন্য গর্বের প্রতীক।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকাল থেকেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমে ওঠে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা।
অনেকে এসেছিলেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে। পুরনো বন্ধু শাহাজাহান কবীরকে শুভেচ্ছা জানাতে এবং সেই প্রিয় বিদ্যাপীঠের মাটিতে পা রাখতে কেউ কেউ আবেগে কেঁদে ফেলেন, কেউ জড়িয়ে ধরেন পুরনো বন্ধুদের।
কারও মুখে ছিল সেই চিরচেনা কথা— “বিশ্ব যত বড়ই হোক, আমাদের শৈশবের স্কুলটাই সবচেয়ে প্রিয় ঠিকানা।”
শাহাজাহান কবীর একেএস স্কুলজীবনেই ছিলেন মেধা, নেতৃত্বগুণ ও ইতিবাচক চিন্তার প্রতীক।
বর্তমানে তিনি আলফা এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দেশের শিক্ষা খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
পাশাপাশি ব্যবসায়িক অঙ্গনে তাঁর নেতৃত্ব ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তাঁকে এনে দিয়েছে বিশেষ মর্যাদা।
আরএমসিসিআই-তে তাঁর নির্বাচনে রংপুরের ব্যবসায়ী মহলে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। স্থানীয় উদ্যোক্তারা মনে করেন, শাহাজাহান কবীরের নেতৃত্বেই রংপুরের বাণিজ্য ও শিক্ষা খাত আরও এগিয়ে যাবে। অনুষ্ঠানে নব্বই ব্যাচের সহপাঠীরা একে একে বক্তব্য রাখেন। তাঁদের কণ্ঠে ভেসে আসে শৈশবের স্মৃতি ও আজকের গর্বের গল্প।
একজন বলেন, “আমরা গর্বিত যে শাহাজাহান শুধু ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করেননি, বন্ধুত্ব, মানবতা আর নেতৃত্বের এক উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করেছেন।”
আরেকজন যোগ করেন, “এই সংবর্ধনা শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের বন্ধুত্বের প্রতীক। সময় বদলায়, বয়স বাড়ে, কিন্তু প্রকৃত বন্ধুত্ব কখনো পুরনো হয় না।” অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোঃ আব্দুল মোত্তালেব (ডাইং কেমিক্যাল, ঢাকা) এবং উপস্থিত ছিলেন মোঃ আনোয়ার হোসেন (সাবেক সেনা কর্মকর্তা) ও মোঃ শামছুল আলম (সরকারি অধ্যাপক, গঙ্গাচড়া বিএম কলেজ, রংপুর), যিনি অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, “শাহাজাহান কবীর একেএস আমাদের বিদ্যালয়ের গর্ব। তাঁকে সংবর্ধনা দিতে পেরে দরদী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় আজ আবার জীবন্ত হয়ে উঠেছে।” পরে শাহাজাহান কবীরকে সংবর্ধনা স্মারক, ফুলেল শুভেচ্ছা ও স্মৃতিচিহ্ন প্রদান করা হয়। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ তখন করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। সংবর্ধিত অতিথি শাহাজাহান কবীর একেএস আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “এই সংবর্ধনা আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি। আমার এই স্কুল, শিক্ষকবৃন্দ ও প্রিয় বন্ধুরাই আমাকে আজকের জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আরএমসিসিআই-এর দায়িত্বে থেকে রংপুরের ব্যবসা, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করবো। আমার স্বপ্ন— রংপুর হবে দেশের শিক্ষা ও বাণিজ্যের অগ্রণী কেন্দ্র।” তাঁর বক্তব্যের সময় উপস্থিত অনেকে চোখের পানি লুকাতে পারেননি। বন্ধুদের আলিঙ্গনে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ তখন রূপ নেয় নিখাদ ভালোবাসার উৎসবে।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে সবাই মিলে কেক কাটা, ফটোসেশন ও স্মৃতিচারণায় অংশ নেন। হাসি-আনন্দে মুখরিত পরিবেশে কেউ বললেন, “এই সংবর্ধনা শুধু শাহাজাহানের নয়, আমাদের সবার জন্য এক পুনর্জাগরণের মুহূর্ত।”
আয়োজকরা জানান, আগামী বছর তাঁরা ‘৯০ ব্যাচ অ্যালামনাই ট্রাস্ট’ গঠন করবেন, যার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা দেওয়া হবে। দিনের শেষে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বিদায় নিলেন একটাই অনুভূতি নিয়ে— পেশা, পদ, অবস্থান বদলায়; কিন্তু বন্ধুত্ব আর স্মৃতির বন্ধন কখনো ম্লান হয় না। এই সংবর্ধনা যেন প্রমাণ করে দিল, শৈশবের সেই ছোট্ট স্কুলই জীবনের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়, আর বন্ধুত্বই মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ।